চিকিৎসার গাফিলতিতে যুবকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তীব্র উত্তেজনা ছড়ালো বর্ধমান শহরের কেশবগঞ্জ চটি এলাকায়। জিটিরোড অবরোধ, নার্সিংহোম ভাঙচুর, পুলিশের লাঠিচার্জকে ঘিরে রবিবার সকাল থেকে গোটা এলাকা রণক্ষেত্রের চেহারা নিল। পরে বর্ধমান থানা থেকে বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। মৃত যুবকের নাম সুমিত কুমার ঠাকুর (২৮)। বাড়ি বর্ধমান শহরের দিঘীরপুল এলাকার পাশিখানায়।
সুমিতের বাবা সুনীল ঠাকুর বর্ধমান জেলা ক্রীড়া সংস্থার ক্রিকেট কোচ। টিম নিয়ে এদিনই তিনি পুরুলিয়ায় রওনা হয়েছিলেন। ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে তিনি ফিরে আসেন। সুমিত বর্ধমান পুরসভার নির্মল ঝিল শ্মশানের গ্যাস চুল্লীর অপারেটর হিসাবে কাজ করত। এদিন সুমিতের প্রতিবেশী সৃজন কুণ্ডু জানিয়েছেন, সুমিত বেশ কিছুদিন ধরেই পেটের ব্যাথায় ভুগছিল। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, অ্যাপেনডিক্স অপারেশন করতে হবে। সেইমত গত শুক্রবার সুমিতকে বর্ধমান শহরের কেশবগঞ্জ চটি এলাকায় সিটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। ওইদিনই তার অ্যাপেনডিক্স অপারেশন করা হয়। রবিবার সকালে নার্সিংহোমের কোনো কর্মী কাছে না থাকায় সুমিত বাথরুমে যায়। আর সেখানেই বাথরুমে জ্ঞান হারায়। এরপর তার বাড়ির লোকদের খবর না দিয়েই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ কোনো ডাক্তারী কাগজপত্র ছাড়াই সুমিতকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
সুমিতের মৃত্যুর এই ঘটনার পরই গোটা এলাকায় তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মৃতের আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে নার্সিংহোমে হাজির হন। বেগতিক দেখে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ নার্সিংহোমে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে যান। উত্তেজিত জনতা নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং ওই নার্সিংহোমকে বন্ধ করে দেবার দাবিতে জিটিরোড অবরোধ শুরু করেন বেলা প্রায় সাড়ে দশটা নাগাদ। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে অবরোধ চলে। এরই মাঝে ক্ষীপ্ত জনতার একাংশ আচমকাই নার্সিংহোমের অপারেশন থিয়েটার সহ অফিসঘরেও বেপরোয়া ভাঙচুর চালায়। এই ভাঙচুরের সময়ই উত্তেজিত জনতা দেখতে পান নার্সিংহোমের দোতলা ও তিনতলায় ৪জন গুরুতর রোগীকে রেখেই বাইরে থেকে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে গেছে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। এরপর পুলিশ তাদের তালা ভেঙে উদ্ধার করে পাশের অপর একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করায়।
এদিকে, জিটিরোড অবরোধ এবং ভাঙচুরকে ঘিরে গোটা এলাকা রণক্ষেত্রের চেহারা নেওয়ায় বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে বেপরোয়া লাঠিচার্জ করে। ঘটনাস্থল থেকেই আটক করা হয়েছে প্রায় ১৬জনকে। বর্ধমান থানার আইসি তুষারকান্তি কর জানিয়েছেন, ভাঙচুর, অবরোধের ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।