রীতিমত বাজার দামের থেকেও চড়া দাম দিয়েই বর্ধমান শহরের বিবেকানন্দ কলেজ মোড়ের গ্লাস ফ্যাক্টরি এলাকায় বাড়ি কিনেছিলেন আন্তর্জাতিক মাদক কারবারের পান্ডা বাবর মণ্ডল। বুধবার ধৃত মাদক কারবারের কিংপিন বাবর মণ্ডলকে সঙ্গে নিয়েই ফের তল্লাশি চালালে রাজ্য এসটিএফের একটি টিম। জানা গেছে, এদিন সকালেই বাবর মণ্ডলের স্ত্রী সাবিনা মণ্ডল এবং নাবালক ছোট ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে এসটিএফ বর্ধমানের গোপালনগর এবং বিবেকানন্দ কলেজ মোড় এলাকার বাড়িতে তল্লাশি চালায়। গাড়িতে বাবর মণ্ডলকে বসিয়ে রেখে তাঁর স্ত্রী ও ছোট ছেলেকে নিয়ে প্রথমে বর্ধমানের বৈকুণ্ঠপুর ২নং গ্রাম পঞ্চায়েতের গোপালনগরের বাড়িতে যান এসটিএফ প্রতিনিধিরা। সেখানে তল্লাশি চালানোর পর সকলকে নিয়েই তাঁরা আসেন বিবেকানন্দ কলেজ মোড় এলাকার বাড়িতে। এখানে তল্লাশি চালিয়ে এসটিএফ বেশ কিছু নথি বাজেয়াপ্ত করে। একইসঙ্গে মাদক কারবারে ব্যবহার করা হত সন্দেহে বাবর মণ্ডলের চারচাকা দামি গাড়িটিও বাজেয়াপ্ত করে।
জানা গেছে, এসটিএফ প্রতিনিধিরা প্রায় নিশ্চিত হয়েছেন গোপালনগরের বাড়িতেই তৈরি হত পোস্তর খোলার সঙ্গে রাসায়নিক মিশিয়ে হেরোইন ও ব্রাউন সুগার। গোপালনগরের আপাত নিরীহ বাড়িতেই নিভৃতে এই মাল তৈরির পর তা গোপনে চলে আসত বিবেকানন্দ কলেজ মোড়ের সিসিটিভির নজরদারিতে মোড়া বাড়িতে। এখান থেকেই গভীর রাতে কখনও চারচাকা আবার কখনও মোটরবাইক নিয়ে বাবর মণ্ডলের ছেলে ধৃত রাহুল মণ্ডল মাদক সরবরাহ করত। এদিন বিবেকানন্দ কলেজ মোড়ের বাবর মণ্ডলের প্রতিবেশী রামানুজ রায় জানিয়েছেন, প্রায় ১ বছর আগে এই বাড়িটি প্রায় ৭০ লক্ষ টাকায় কেনেন বাবর মণ্ডল। তিনি দাবি করেছেন, ওই এলাকায় এই বাড়ির দাম হতে পারে সর্বোচ্চ ৫০ থেকে ৫৫ লাখ টাকা। কিন্তু তা সত্ত্বেও অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে এই বাড়ি কেনা হয়েছিল। রামানুজ রায় জানিয়েছেন, বাবর মণ্ডল বা তাঁর ছেলে কারও কোন আচরণ খারাপ ছিল না। রামানুজবাবু জানিয়েছেন, প্রায়ই তাঁরা দেখতেন রাহুল রাত প্রায় ১১টার পর গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যেতেন। যদিও তা নিয়ে তাঁদের কখনও সন্দেহ হয়নি। রামানুজবাবু জানিয়েছেন, এত জঘন্য অপরাধের জন্য তাঁরা চান বাবর মণ্ডলরা যেন এই পাড়ায় আর না থাকেন। কারণ তাঁদের এলাকা অত্যন্ত শান্ত। সেই এলাকায় বসে এই কারবার চালানো তাঁরা মেনে নিতে পারছেন না।
উল্লেখ্য, এই বিবেকানন্দ কলেজ মোড়ের বাড়িটি কেনার ক্ষেত্রে বাড়ির দু’দিকের রাস্তা এবং শান্ত এলাকাকেই মাথায় রাখা হয়েছিল বলে মনে করছেন প্রতিবেশীরা। এদিকে, জানা গেছে, এদিন এসটিএফ এই বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে মোটামুটি প্রায় নিশ্চিত এই বাড়িতে হেরোইন তৈরি হত না। এখান থেকে সরবরাহ করা হত। জানা গেছে, এই হেরোইনের কারবার করে বাবর মণ্ডল বর্ধমান শহর জুড়েই প্রচুর পরিমাণ সম্পত্তি বাড়িয়েছেন। এসটিএফ সেই সমস্ত সম্পত্তির খোঁজখবর চালাচ্ছে। উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক এই মাদক কারবারে ইতিমধ্যেই এসটিএফ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে। যার মধ্যে বর্ধমানের বাবর মণ্ডল এবং তার ছেলে রাহুল মণ্ডল ছাড়াও মণিপুরের ২ জন এবং ওড়িশার ২ জন রয়েছেন। এখনও পর্যন্ত প্রায় ৬৫ কোটি টাকার হেরোইন সহ বিভিন্ন সরঞ্জাম বাজেয়াপ্ত করেছে এসটিএফ। বাজেয়াপ্ত হয়েছে নগদ প্রায় ২০ লক্ষ টাকাও। জানা গেছে, মণিপুর থেকে কাঁচামাল এনে তা বর্ধমানেই প্রক্রিয়াকরণের পরে এই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত ছাড়াও উত্তরপ্রদেশেও পাঠানো হত। সন্দেহ করা হচ্ছে প্রতিবেশী বাংলাদেশ সহ অন্যান্য দেশেও তা পাঠানো হত। এসটিএফ সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিককালে গোটা রাজ্যের মধ্যে এই মাদক কারবারের পর্দা ফাঁস সব থেকে বড়। এর আগে এতবড় মাদক কারবারের হদিশ মেলেনি।