মাতলো রে ভুবন … ভোর ৪টের এই মহালয়ার গান শুনেই সোমবার সকালে ঘুম ভাঙবে আম বাঙালীর। সাইবার যুগ, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সব হাইটেক গ্যাজেট। একটা সময় ছিল যখন সারা বছর এই দিনটার জন্য আম বাঙালী বসে থাকত। আগের রাতে শুতে যেত ভোর ৪টেয় ঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়ে। বিষ্ণুর তথাকথিত যোগনিদ্রার মতই, সিংহভাগ মানুষ আধো ঘুমের মধ্যে দিয়ে শুনতেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের সেই ভরাট কণ্ঠের মহালয়ার সুর। চণ্ডীপাঠ, দেবী বন্দনার শ্লোক আওড়াতে গিয়ে সেই বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের যখন গলায় কান্নার আবেগ জড়িয়ে যেত – বাঙালীরও গলাতেও যেত, এখনও যায়।
সকালের আলো ফুটলেই গভীর আক্ষেপ – ইস্ শেষটা আর শোনা হল না – চোখটা একটু লেগেছিল, ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। সারাদিনই গুণগুণ করে কখনও মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের সুরে গাওয়া – মম চণ্ডী…, আবার কখনও জাগো জাগো মা…। বস্তুত, মহালয়ার এই দিনটি নিয়ে সাধারণ গড়পড়তা বাঙালীর যেমন যতটাই আবেগ তীব্র ঠিক ততটাই বেদনার সুর। এই মহালয়ার পুরো অনুষ্ঠানটি শোনার আবেগ আর শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়ার আক্ষেপ আজও বিদ্যমান।
আর মহালয়ার ঠিক কয়েকদিন আগেই খোঁজ পড়ে নিমাইদাদের। কিন্তু সারাবছর তারা কেমন করে বেঁচে আছেন – কেউ খবর রাখেনি। অথচ যান্ত্রিক গোলযোগে কথা বলা বন্ধ হয়ে যাওয়া সেই রেডিওগুলোতে তিনিই বোল ফোটান। কথা বলান তাঁর হাতের জাদুতে। বর্ধমান শহরের বৈদ্যনাথ কাটরার দত্ত সেণ্টারের মধ্যে ৫ ফুট বাই ৫ ফুটের দোকান নিমাইদার। ভাল নাম নিমাইচন্দ্র মোদক। মহালয়ার কয়েকদিন আগে থেকেই কাজের চাপে নাওয়া-খাওয়ার সময় থাকে না। রাণিগঞ্জ বাজারের রেডিও টেকনিসিয়ান, দেবাশীষ দাস জানান গত সাত দিনে তিনি ৫০ টিরও বেশি পুরানো রেডিও সেট সারাই করেছেন।
নিমাইদা জানিয়েছেন, যতই টিভির দুনিয়া বাজার চমকাক, এখনও যে মহালয়ার টানে বেতারের কদর কমেনি তাতো টের পাওয়া যাচ্ছেই। আর সারাবছর ধরে যে রেডিওটার গায়ে হাত পড়েনি আজ তাকেই ধূলো ঝেড়ে পরিষ্কার করে বোল ফোটানোর জন্য তাঁর কাছেই ছুটে আসেন মানুষ। মাত্র ১টি ঘণ্টার সেই অমোঘ সুর শোনার জন্যই সারা বছরের অকেজো রেডিওগুলো প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে এই সময়। যতই সিডি বা ইউ টিউব থাকুক, সারাদিনে যে কোনো সময়ই তা শোনা হোক না কেন, মহালয়ার পূণ্য প্রভাতে রেডিও সেন্টার খোলার সেই বিখ্যাত মিউজিক আর তারপরেই আকাশবাণী কলকাতা… শোনার সেই গায়ে কাঁটা দেওয়া আওয়াজ ভোলার নয়। তবে মহালয়ার আগে বাজার ধরার জন্য মহালয়ার গানকে ব্যবহার করার বিরোধী নিমাইদা। জানিয়েছেন, মহালয়ার মাধুর্য্যটাই নষ্ট হয়ে যায় তাতে।