পূর্ব বর্ধমান জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে চুড়ান্ত জেদ ও অধ্যবসায়ের জোরে মুম্বাই সহ গোটা ভারতবর্ষে নজর কাড়লেন এক যুবতী, সাথী দে। পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার পাঁচড়া গ্রামের বাসিন্দা। বর্তমানে তাঁর ‘হেয়ার এরিয়াল অ্যাক্ট’, অর্থাৎ চুল দিয়ে হাওয়ায় ঝুলে নাচ, যা দেখে রীতিমত মুগ্ধ নেটিজেনরাও। ইতিমধ্যেই সোনি টিভির জনপ্রিয় রিয়েলিটি শোয়ের চলতি সিজন, ‘ইন্ডিয়াজ গট ট্যালেন্ট-৯’-এ সাথী তাঁর হেয়ার এরিয়াল হেয়ার অ্যাক্ট দিয়ে গোটা দেশকে মুগ্ধ করেছেন। মুগ্ধ শোয়ের বিচারকরাও। প্রথম পারফরম্যান্সেই মিলেছে ‘স্ট্যান্ডিং ওভেশন’। পাশাপাশি মিলেছে ‘গোল্ডেন বাজার’। যার ফলে প্রথম ১৬ জনে সরাসরি জায়গা করে নিয়েছেন সাথী। রীতিমত তাঁরা এই ডান্স পারফরম্যান্স ভাইরাল হয়েছে।
সাথী জানিয়েছেন, আজ তিনি যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছেন তাঁর সেই পথটা কিন্তু মসৃণ ছিল না। তিনি জানিয়েছেন, তিনি ৩ বছর বয়সে তাঁর মা তৃপ্তি দে-র ইচ্ছায় গ্রামের একটি অনুষ্ঠানে নাচেন। তাঁর সেই নাচের জন্য মা তাঁকে একটি লজেন্স দিয়েছিলেন। কার্যত সেদিন সেই লজেন্সের লোভেই স্টেজ মাতিয়েছিলেন তিনি। কুড়িয়েছিলেন গ্রামের মানুষের শুভেচ্ছাও। এরপর মেমারিতে তাঁকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যখন তিনি নবম শ্রেণির ছাত্রী তখন প্রথম পা রাখেন কলকাতায়। মাকে সঙ্গে নিয়ে সাইকেলে ২০মিনিট পথ অতিক্রম করে মশাগ্রাম স্টেশন। সেখান থেকে ডানকুনি হয়ে শিয়ালদহ যেতেন দিনের পর দিন। সঙ্গে মা মেয়ের দুপুরের আহার মুড়ি আর ছোলা। চুড়ান্ত পরিশ্রম আর মা-মেয়ের জেদই আজ তাকে পাঁচড়া গ্রাম থেকে মুম্বাই পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে।
টানা ২ বছর ধরে মুম্বাইয়ে নানান পারফরম্যান্স করার পর কিছু সমস্যার জন্য তিনি ফিরে আসেন ফের গ্রামের বাড়িতে। কিন্তু সেটা সাময়িক। তারপর আবার মুম্বাই। ভবিষ্যতের স্বপ্ন আরও বড়। গোটা ভারতবর্ষে এই নাচের মধ্য দিয়েই তিনি নিজেকে মেলে ধরতে চান। বাংলার মুখ উজ্জ্বল করতে চান। সাথী জানিয়েছেন, নিজেকে একটু অন্যরকমভাবে উপস্থাপন করার ভাবনা থেকেই এই হেয়ার এরিয়াল অ্যাক্টের ভাবনা। এই অ্যাক্টে জীবনের ঝুঁকি থাকলেও এটা করেই আনন্দ পান তিনি। ইতিমধ্যেই বিয়েও হয়েছে তাঁর। আর তাঁর এই নাচের বিষয়ে যেমন মা তার প্রেরণা তেমনই তাঁর স্বামী অভিষেকও উৎসাহ দিয়ে থাকেন এবং সবরকমের সাহায্য করে চলেছেন তিনি। রয়েছেন ডান্সগুরু সম্রাট মন্ডলের সহযোগিতাও। বাবা গণেশ চন্দ্র দে কৃষিজীবি। চাষবাসই ভরসা। গ্রামের স্কুলেই পড়াশোনা করার পর মেমারি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন সাথী। এখন জামালপুরের পাঁচড়া গ্রাম তাকিয়ে রয়েছে সাথীর সাফল্যের দিকে।
Photo Curtsey: Sony Tv