চৈত্রের শেষে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার সঙ্গে বর্ধমান জেলার মানুষও মাতলেন শিবের গাজনে। ভোটের রাজনীতি ভুলেই পূর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে পালিত হল গাজন। তবে নজর কাড়ল শত শত বছরের পুরনো রীতি ও রেওয়াজের পরিবর্তন। মড়ার মাথা নিয়ে নাচানাচি, গ্রাম প্রদক্ষিণের রেওয়াজে এবার পরিবর্তনের সূচনা হল কুড়মুন এবং সোনাপলাশী গ্রামে।
বর্ধমানের সোনাপলাশী গ্রামের বাসিন্দা জ্যোতিপ্রকাশ ব্যানার্জ্জী জানিয়েছেন, কয়েকশো বছর ধরেই কুড়মুন, সোনাপলাশী সহ বেশ কয়েকটি গ্রামে চৈত্র মাসের শেষে নীল পুজোর দিন এই গাজন উৎসবের চল রয়েছে। মূলতই শিবের পুজো। সোনাপলাশী গ্রামে বুড়ো শিব, কুড়মুনে ঈশানেশ্বর, রায়ান গ্রামে দক্ষিণেশ্বর শিবকে উপলক্ষ্য করেই এই গাজন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। জ্যোতিপ্রকাশবাবু জানিয়েছেন, এই গাজন উপলক্ষ্যে শিবকে সন্তুষ্ট করতে কয়েকদিন আগে থেকেই ব্রত রাখেন গ্রামবাসীরা যাদের পোশাকি নাম সন্ন্যাসী। বোলান গান দিয়ে শুরু হয় গাজন। এরই মাঝে সন্ন্যাসীরা বিভিন্ন জায়গা থেকে মড়ার মাথার সন্ধান করে রাখেন। আগেরদিন রাতে তা নির্দিষ্ট একটি গাছে লুকিয়ে টাঙিয়েও রেখে আসেন। গাজনের দিন ভোরবেলায় সেই গাছ থেকে মড়ার মাথা নামিয়ে এরপর শুরু হয় নাচানাচি। অনেক সময়ই এজন্য পচা দুর্গন্ধে ঢেকে যায় গোটা এলাকা। কিন্তু লোকাচারের ভয়ে তা নিয়ে কেউই মুখ খোলেন না।
জ্যোতিপ্রকাশবাবু জানিয়েছেন, বছরের পর বছর ধরে চলে আসা এই লোকাচারে এবারই কিছুটা ছন্দপতন ঘটেছে। কারণ বিভিন্ন কবরস্থান বা শ্মশান থেকে পচাগলা মাংস সহ মড়ার মাথা সংগ্রহ করা নিয়েই ইতিপূর্বে একাধিক অভিযোগ, গ্রেপ্তারের মত ঘটনাও ঘটেছে। জ্যোতিপ্রকাশবাবু জানিয়েছেন, পুরনো রীতি রেওয়াজকে ধরে রাখতে মামলা-মোকদ্দমার এই ঝামেলা তাই এখন অনেকেই নিতে চাইছেন না। যদিও তা নিয়ে পরপস্পরবিরোধী অভিমতও রয়েছে। কিন্তু তারই মাঝে এবছর কিছুটা সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছেন কয়েকজন সন্ন্যাসী। প্রতিবারের মত এবার মড়ার মাথার বদলে প্লাস্টিকের প্রতীকি মাথা নিয়েই তাঁরা নাচানাচি করেছেন – যা রীতিমত নজর কেড়েছে অনেকেরই।