রাজ্যজুড়ে যখন তৃণমূলের প্রধান, উপপ্রধানদের বিশাল বিশাল অট্টালিকা, বৈভব নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা তখন কোথাও যেন এসব থেকে শতযোজন দূরে পূর্ব বর্ধমানের মেমারি ২ নং ব্লকের বিজুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ঝর্ণা রায়। নিজে দুই বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন, নিজের গৃহকোণ সামলে দলের দেওয়া পঞ্চায়েত প্রধানের দায়িত্বও গুরত্ব দিয়ে সামলাচ্ছেন। নিপাট সাদামাটা জীবনে অভ্যস্ত ঝর্ণা রায় জানান, মমতা ব্যানার্জীর আদর্শে অনুপ্রাণিত তিনি। দল মানুষের সেবা করার জন্য তাঁকে যোগ্য মনে করায় এই পদ দিয়েছে। তাই তিনি দল ও দলনেত্রীর নিন্দার কারণ হতে চান না। তাই তিনি প্রধান বা সদস্য হওয়ার আগে যে পেশায় ছিলেন সেই পেশা ছাড়তে চান না। তিনি বলেন, ‘পদ আজ আছে কাল চলে যাবে, কিন্তু আমাকে কাজ করেই খেতে হবে।’ তাই লোকের বাড়িতে নিয়মিত পরিচারিকার কাজ করে অভাব অনটনের মধ্যেই সংসার চালাচ্ছেন তিনি।
মাটির ভেঙে পড়া বাড়িতে কোন রকমে পঞ্চায়েতের ত্রিপল লাগিয়ে জীবন যাপন। পরপর দু’বার তৃণমূলের টিকিটে বিজুর ১নং গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য। ২০১৮ সালে বিজুর ১নং গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান হিসাবে নিযুক্ত হয়েছেন ঝর্ণা রায়। আর রাজ্যের মধ্যে তিনি একজন দৃষ্টান্ত, গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান হয়েও এখনও পাড়ার দুই বাড়িতে নিয়মিত দু’বেলা পরিচারিকার কাজ করেন। আর তা দিয়েই কোনরকম একাই টেনে চলেছেন সংসার।
ঝর্ণা রায় জানিয়েছেন, তাঁর দুই মেয়ে। কোনরকমে মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। স্বামী নীলু রায় দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ। তাঁর দুটি কিডনিই খারাপ, রয়েছে হার্টের সমস্যাও। এর সঙ্গে দেখা দিয়েছে তাঁর মানসিক সমস্যাও। পঞ্চায়েত প্রধান হিসাবে তিনি সাম্মানিক পান মাসে ৫ হাজার টাকা। যা দিয়ে স্বামীর চিকিৎসা খরচই ঠিকমত হয় না। স্বাভাবিকভাবেই দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের সংস্থান করতে তিনি এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন পরিচারিকার কাজ। আর তা দিয়েই কোনরকমে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। আশু প্রয়োজন একটা স্থায়ী চাকরী কিংবা কাজের। কিন্তু আজ পর্যন্ত নিজের এই অসুবিধা বা সমস্যার কথা কাউকে বলতে পারেননি তিনি। পরিচারিকার কাজ করার জন্য তাকে মাঝেমাঝেই কটুক্তিরও শিকার হতে হয় বলে দাবী ঝর্ণা রায়ের। তবে তাতে তিনি কিছু মনে করেন না। তার সোজা উত্তর – কোন কাজই ছোট নয়।
মেমারি ২নং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মামণি মূর্মূ তাঁর এই অবস্থা দেখে কখনও সখনও নানাভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। মামণি মূর্মূ জানিয়েছেন, যখন তৃণমূল দল থেকে তাঁকে সংরক্ষিত আসনে দাঁড় করানো হয়েছিল তখন তাঁর সততাকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল। কখনও কারও কাছে হাত পাতেননি। বলেননি নিজের সমস্যার কথা। অথচ প্রতিদিনই হাজারও মানুষ তাঁর কাছে আসেন বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে। তিনি মেটানোর চেষ্টাও করেন। প্রধান হিসাবে তিনি ২৪ ঘণ্টাই তাঁর দায়িত্ব পালন করে চলেছেন নিরলসভাবে। ঝর্ণাদেবী মাধ্যমিক পাশ করেছেন। উচ্চমাধ্যমিক দেওয়ার জন্য প্রস্তুতিও শুরু করেছেন। ইচ্ছা স্নাতক হওয়ারও। ঝর্ণা রায়ের এই জীবনযুদ্ধে সহযোগীতা করেন তার সহকর্মীরাও।
গ্রামেরই বাসিন্দা তপন কুমার পাল জানিয়েছেন, তাঁর বাড়িতে ১২ বছর ধরে দু’বেলা কাজ করছেন ঝর্ণাদেবী। অত্যন্ত কষ্টে সংসার চালাচ্ছেন। কিন্তু কখনই প্রধান পদের অপব্যবহার করেননি আজ পর্যন্ত। তবে তিনি তো প্রধান তাই একটু সংকোচও হয় বাড়িতে কাজ করা নিয়ে। ঝর্ণা রায়ের সততা নিয়ে বিজেপি কাটোয়া সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ পোদ্দার জানান,কিছু মানুষ তো সত্যিই আছে যারা সৎ। বিজেপি করি বলেই বিরোধীতা করবো এটা ঠিক নয়।