করোনার জেরে এবছর বন্ধ রাখা হচ্ছে পানাগড়ের বহু প্রাচীন ‘মুড়ি মেলা’। প্রতি বছরের মত এবছরও পানাগড় বাইপাশ সংলগ্ন এলাকায় মকর সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে গৈধারা মন্দির সংলগ্ন এলাকায় মেলা বসার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে প্রসাশনের নির্দেশে মেলা বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয় মেলা কমিটির সদস্যরা। গৈধারা মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেই বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সমগ্র কাঁকসায় মেলা বন্ধের কথা মাইকে প্রচার করা হয়।
মেলা কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, দিনদিন যে ভাবে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের নির্দেশ মেনে করোনার সংক্রমণ যাতে না ছড়ায় সেই কথা বিবাচনা করে মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কমিটির সদস্য রবি মেটে ও মহেশ্বর মেটে জানিয়েছেন, প্রতি বছর মকর সংক্রান্তির দিনে মন্দির সংলগ্ন জলাশয়ে মকর স্নান করে হাজার হাজার মানুষ গৈধারা মন্দিরে পুজো দিতে মেলায় ভিড় জমান। শীতের মরশুমে ওই মেলায় মুড়ি আর তেলে ভাজা খেয়ে সপরিবার পিকনিকের আমেজ উপভোগ করতে আসেন তাঁরা। কাঁকসা ছাড়াও আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এই মেলায় ভিড় জমান। এবার শুধু মাত্র মেলা প্রাঙ্গণে পুজোর ব্যবস্থা করা হয়েছে রীতি মেনে। করোনার বিধি নিষেধ মেনে যারা পুজো দিতে আসবেন তাঁদেরকেই শুধু মেলায় প্রবেশ করানো হবে।
কমিটির সদস্য রবি মেটে জানিয়েছেন, এই মেলা বহু প্রাচীন। এই মেলার সূচনা করেছিল এলাকার রাখালরা। শোনা যায় মকর সংক্রান্তির দিনে রাখালরা গরু নিয়ে মাঠে চড়াতে যেত। তাই মকর সংক্রান্তির দিনে যখন অন্যরা নানান জায়গায় মকর স্নানে যেতেন তখন নিরুপায় হয়ে এলাকার রাখালরা গামছায় করে মুড়ি আর তেলেভাজা নিয়ে গৈধারা মন্দির সংলগ্ন জলাশয়ে মকর স্নান সেরে মন্দিরে পুজো দিয়ে সেখানে মুড়ি আর তেলেভাজা খেয়েই মকর সংক্রান্তি পালন করত। বছর কয়েক পরে এলাকার মানুষরাও সেখানে পুজো দিতে যেত স্বপ্নাদেশ পেয়ে। ধীরে ধীরে মানুষের ভিড় বাড়তেই একটি-দুটি করে দোকান বসতে শুরু করে। যা পরে বৃহৎ আকার মেলায় পরিণত হয়। শোনা যায়, মন্দির সংলগ্ন জলাশয়ে কোন নিঃসন্তান দম্পতি দেবীর কাছে মানত করে জলাশয়ে ডুব দিয়ে মাটি হাতড়ে যা পেতেন সেটি তাঁরা রেখে দিতেন। পরে তাঁদের সন্তান হলে পুনরায় জলাশয় থেকে পাওয়া জিনিস ফের জলে ডুব দিয়ে জলেই দিয়ে আসতেন। এমন ধরণের অলৌকির কাহিনী জড়িয়ে আছে এই মন্দির নিয়ে।