কড়া পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে শনিবার প্রায় সাড়ে তিন বছর পর বাড়ি ফিরলেন ৮০ বছরের বৃদ্ধ বাদল হেমব্রম, তাঁর স্ত্রী লক্ষ্মী হেমব্রম ও পরিবারের অন্য সদস্যরা। বর্ধমান সদর দক্ষিণের মহকুমা শাসক অনির্বাণ কোলের নেতৃত্বে এদিন গ্রামে হাজির ছিল বিশাল পুলিশ বাহিনী। সদর মহকুমা পুলিশে আধিকারিক শৌভনিক মুখার্জী বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে এদিন দুপুর প্রায় ১২টা নাগাদ বাদল হেমব্রমের পরিবারকে নিয়ে হাজির হন মেমারীর কাঁটাডাঙা গ্রামে। বাদল হেমব্রমদের গ্রামে প্রবেশের ক্ষেত্রে বিরোধিতা ছিলই। তাই আদিবাসী রীতি অনুসারে এদিন বাদল হেমব্রমদের আসার পথে ছোট ছোটে খড়ের মড়াই তৈরী করে আমপাতা দিয়ে ঢেকে রাস্তা অবরুদ্ধ করারও চেষ্টা করেন গ্রামের আদিবাসী মাতব্বর ও মহিলারা।

দুপুর প্রায় ১২টা নাগাদ যখন বাদল হেমব্রমরা গ্রামে ঢুকলেন তখন তাঁদের উদ্দেশ্য করেই শুরু হল গালিগালাজ, গ্রামে ঢুকতে না দেওয়ার ফতোয়াও। পরিস্থিতি আঁচ করে আগেই বিভিন্ন আদিবাসী সংগঠনগুলির নেতারা গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনা করতে শুরু করেছিলেন। বাদলবাবুদের ঢোকার মুখে প্রায়ে ১৫০ মহিলার প্রবল বিরোধিতায় শেষ পর্যন্ত মাইক নিয়ে পরিস্থিতি সামালের চেষ্টা করেন সংগঠনের নেতারা। পুলিশ এই বিরোধিতাকে পাত্তা না দিয়েই পরিবারের ১৭জন সদস্যকে নিরাপদে পৌঁছে দিল কাটাডাঙা গ্রামে বাদল হেমব্রমের বাড়িতে।

প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে এই গ্রামেই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ৪জনের। আর তারপরেই বাদল হেমব্রমদের ডাইন আখ্যা দিয়ে তাদের ওপর শুরু হয় অত্যাচার। মারধোর। গ্রাম থেকে তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর গত সাড়ে তিন বছরে মেমারীর সাতগেছিয়া অঞ্চলের ঝিকড়া, কুচুট প্রভৃতি বিভিন্ন এলাকায় আত্মীয়দের বাড়িতেই তাঁদের কাটাতে হয়। গ্রামে ফিরে যাবার জন্য দফায় দফায় প্রশাসনের দরজার কড়া নাড়িয়েও লাভ হয়নি। অবশেষে রাজ্য মহিলা কমিশনের কাছে নালিশ জানানোর পর উদ্যোগ নেয় প্রশাসন।

গত ৩দিন ধরে বাদল হেমব্রমদের বাড়ি মেরামতের কাজ চলে। তৈরী করা হয়েছে শৌচাগারও। আর শনিবার রীতিমত কড়া পুলিশ প্রহরায় তাদের পৌঁছে দেওয়া হল নিজের বাড়িতে। মহকুমা শাসক অনির্বাণ কোলে জানিয়েছেন,দীর্ঘদিনের সমস্যা। আলোচনা করে মেটানোর চেষ্টা চলছে। প্রশাসন ওই পরিবারকে সবরকমের সহায়তা দেবে। এসডিপিও শৌভনিক মুখার্জী জানিয়েছেন, এই ঘটনার তদন্ত চলছে। দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপাতত বাদল হেমব্রমের বাড়ির সামনেই তৈরী করা হয়েছে সশস্ত্র অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প। লাগানো হয়েছে সিসিটিভিও।

Like Us On Facebook