অলক্ষ্মীকে সসম্মানে পুজো করে তাঁকে বিসর্জন দিয়েই কালীপুজোর দিন বাড়িতে নিয়ে আসেন গৃহলক্ষ্মীকে। প্রথমে বাংলাদেশ এবং পরে বর্ধমানের দে পরিবারে গত ৪৪ বছর ধরে এই ধারাই চলে আসছে। কালীপুজোর দিন লক্ষ্মীপুজো। অবাক লাগলেও বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৪৪ বছর আগে আসা বর্ধমান শহরের মেহেদিবাগান এলাকার দে পরিবারে এই কালীপুজোর দিন অমাবস্যাতেই পুজিতা হচ্ছেন দেবী লক্ষ্মী। একেবারেই পারিবারিক পুজো হলেও দে পরিবারের এই কালীপুজোর দিন লক্ষ্মীপুজোর এই ঘটনায় গোটা এলাকার মানুষই তাতে নিমন্ত্রিত হন।
দে পরিবারের গৃহবধু পুষ্প দে জানান, এবার বছরে ৪৪ বছরে পা দিল তাঁদের পারিবারিক এই লক্ষ্মীপুজো। তিনি জানান, আজ থেকে প্রায় ৪৪ বছর আগে বাংলাদেশ থেকে বর্ধমানে এসে একেবারেই ছোট একটি ব্যবসা শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ দে। এরপর তাঁদের বাংলাদেশের পারিবারিক ঐতিহ্য মেনেই বর্ধমানের বাড়িতে শুরু করেন একেবারেই ছোট আকারে এই লক্ষ্মীপুজো। বাংলাদেশের খুলনার বাড়িতে কালীপুজোর দিন অমাবস্যাতেই লক্ষ্মীপুজোর চল রয়েছে। সেই সূত্র ধরেই বর্ধমানের বাড়িতে এই পুজোর প্রচলন শুরু হয়। দুর্গাপুজোর পর কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর আদলেই এই অমাবস্যা তিথিতে লক্ষ্মীপুজো হয় দে পরিবারে।
পুষ্প দে জানান, পুজোর বিশেষত্বের মধ্যে রয়েছে সন্ধ্যায় মাটি অথবা মাটির অভাবে ময়দা দিয়ে তৈরী করা হয় অলক্ষ্মীর মূর্তি। প্রথমে বাড়ির বাইরে সেই অলক্ষ্মীর পুজো হয়। পুজোর পর তা বিসর্জনের পর বাড়িতে আবাহন করা হয় মা লক্ষ্মীকে। চিড়ে, খই, মুড়কি, বাতাসার সঙ্গে অবশ্যই থাকে নাড়ু। পুজো উপলক্ষ্যে গোটা এলাকার প্রায় শতাধিক মানুষকে খাওয়ানোরও রেওয়াজ চলে আসছে। তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশে বড় আড়ি পেতে ধান দিয়ে পুজোর চল ছিল। কিন্তু এখানে তিনি লক্ষ্মী প্রতিমাকে এনেই পুজো করছেন। বৃহস্পতিবার যখন গোটা দেশ জুড়ে কালীর আরাধনায় ব্রতী মানুষ, সেই সময় রীতিমত বরণ করেই লক্ষ্মীকে তোলা হল দে পরিবারের ঠাকুর ঘরে। বাড়ির দুই গৃহবধু অপর্ণা দে এবং মৌমিতা দে জানিয়েছেন, সারাবছর তাঁরা এই দিনটির জন্যই অপেক্ষা করে থাকেন। সকাল থেকেই পুজোর জোগাড়ে ব্যস্ত থাকতে তাঁদের ভালই লাগে। আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীদের নিয়ে এই আনন্দের জন্যই তাঁরা এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করে থাকেন।