একদিকে যখন রাজ্যে মিষ্টি শিল্পে স্বীকৃতি পেয়েছে বর্ধমানের ল্যাংচা, মিহিদানা, সিতাভােগ তখন সেই জেলারই ঐতিহ্য মানকরের কদমা আজও পেল না স্বীকৃতি। সারা বছর তাে বটেই বিশেষ করে পুজোর সময় ব্যাপক চাহিদা থাকে মানকরের কদমার। বাজারে সস্তায় কদমা পাওয়া গেলেও তাতে রাসায়নিক প্রযোগ করে সাদা করে তা বাজারে বিক্রি করা হয়। মানকরের কদমায় কোনও রকম রাসায়নিক প্রয়ােগ না করে শুধু চিনি ফুটিয়ে তাতে ছানার জল মিশিয়ে তৈরি করা হয় কদমা। তাই স্বাদ ও ঐতিহ্যে আজও একই রকম জনপ্রিয় মানকরের কদমা।
এক সময় মানকরের প্রতিটি বাড়িতে বাড়িতে তৈরি হলেও যত দিন যাচ্ছে চিনির দাম ও কারিগরদের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় খরচ অনেক বেড়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই দামও বেড়েছে কদমার। ফলে চাহিদা অনেক কমেছে, তাই আজ আর তেমন ভাবে তৈরি হয় না কদমা। মানকরের কয়েকজন মিষ্টি বিক্রেতা আজও এই শিল্পকে টিকিয়ে রেখেছেন। তবে মূল্য বৃদ্ধির জন্য কতদিন টিকিয়ে রাখতে পারবেন এই শিল্পকে সেটা নিয়েই চিন্তিত তাঁরা। আগে কদমা ভিন রাজ্যেও পাঠানো হত। মূল্য বৃদ্ধির কারণে আজ আর তেমন ভাবে ভিন রাজ্যে চাহিদা নেই। তবুও এই বছর রজ্যের কয়েকটি জেলার পাশাপাশি দিল্লি ও মুম্বাইয়ে পাঠানো হচ্ছে কদমা।
এখনও সন্ধ্যা হলেই মানকরের হাটতলায় চরম ব্যস্ততা চোখে পড়ে কদমা শিল্পীদের। কোনও রকম রাসায়নিক ছাড়াই কদমা প্রস্তুত করা দেখতে ভীড় জমান এলাকার কচিকাঁচা থেকে প্রবীণরা৷ জানা গেছে, আগে অনেকে বিয়ে বা কোনও অনুষ্ঠানে শাড়ি, গয়নার মতো বিভিন্ন উপহার সামগ্রী কদমার ভিতর ভরে উপহার দিতেন। বাইরে থেকে কিছু বোঝা না গেলেও কদমা ভাঙলেই বেরিয়ে আসত উপহার।
মানকরের কদমাকে নিয়ে গর্ব বােধ করেন এলাকার বাসিন্দারাও। একসময় বড় বড় কদমা তৈরি হলেও এখন ৫০ গ্রাম থেকে ৮ কিলাে ওজনের কদমা তৈরি করা হয়। সরকারের কাছে শিল্পীদের আবেদন, সরকার যদি কদমা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কারিগরদের কথা না ভাবে তবে ক্রমেই হারিয়ে যাবে বাংলার এই শিল্প।