পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু জায়গায় ইতিপূর্বে অস্ত্র তৈরির কারখানার হদিশ মিললেও সম্ভবত রাজ্যে প্রথম বর্ধমানে স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের হানায় বেড়িয়ে এল আন্তর্জাতিক মাদক তৈরির কারখানা। প্রায় ১৩ কোটি টাকা মূল্যের হেরোইন তৈরির উপকরণ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে এই কাজে যুক্ত বাবা ও ছেলে যথাক্রমে বাবর মণ্ডল এবং রাহুল মণ্ডলকে। উদ্ধার করা হয়েছে নগদ প্রায় ২০ লক্ষ ১০ হাজার টাকা।

রবিবার গভীর রাতে বর্ধমানের বিবেকানন্দ কলেজ মোড় এলাকা এবং একইসঙ্গে বর্ধমানের বৈকুণ্ঠপুর ২ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের গোপালনগর এলাকার দুটি আধুনিক প্রযুক্তিতে মোড়া প্রাসাদোপম বাড়িতে হানা দেয় এসটিএফের নেতৃত্বে বিশাল ফোর্স। দুটি বাড়িই বাবর মণ্ডলের। একটি বাড়িতে বড় ছেলে রাহুল মণ্ডল তাঁর স্ত্রী ও পরিবার নিয়ে থাকতেন। অন্য বাড়িতে থাকতেন বাবর মণ্ডল তাঁর স্ত্রী সাবিনা মণ্ডল এবং নাবালক ছোট ছেলেকে নিয়ে। রবিবার রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা নাগাদ বিশাল পুলিশ বাহিনী আচমকাই ঘিরে ফেলে বিবেকানন্দ কলেজ মোড় এবং গোপালনগর এলাকার দুটি বাড়ি। এই ঘটনায় চমকে ওঠেন প্রতিবেশীরা। সোমবার প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, গোটা বিষয় সম্পর্কে তাঁরা কিছুই জানতেন না। তাঁরা জানতেন বাবর মণ্ডল মুরগী ব্যবসা করেন। কিন্তু সেই মুরগীর ব্যবসার আড়ালে যে বর্ধমান শহরেই তৈরি হত হেরোইন – তা ভেবে তাঁরা আতঙ্কিত।

এসটিএফ সূত্রে জানা গেছে, মাদক সংক্রান্ত একটি কেস রুজু হয় হাওড়ার গোলাবাড়ি থানায়। সেই ঘটনার তদন্তে নেমে ইতিমধ্যেই স্পেশাল টাস্ক ফোর্স আন্তরাজ্য মাদক কারবারের হদিশ পায়। গ্রেফতার হয়েছে ৬ জন। তাদের মধ্যে দু’জন ওড়িশার, দু’জন মণিপুরের এবং দু’জন এ রাজ্যের তথা বর্ধমানের বাসিন্দা। এখনও পর্যন্ত বাজেয়াপ্ত হয়েছে প্রায় ৬৫ কোটি টাকার হেরোইন ও তা প্রক্রিয়ার সামগ্রী। বাজেয়াপ্ত হয়েছে প্রায় ২০ লক্ষাধিক টাকাও। বর্ধমান শহরের মাঝেই গোপনে চলছিল আন্তরাজ্য এই হেরোইন কারবার।

জানা গেছে, মণিপুর থেকে কাঁচামাল এনে বর্ধমানে তা প্রক্রিয়াকরণ করে পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশায় পাঠানো হতো। এসটিএফ সূত্রে আরও জানা গেছে, পশ্চিমবঙ্গে তিন দিনের অভিযানে হেরোইন তৈরি ও বন্টনের সাথে জড়িত একটি আন্তরাজ্য চক্রকে পাকড়াও করা হয়েছে। কারবারিরা মণিপুর থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে তা বর্ধমান শহরের শ্রীপল্লী এলাকার বাবর মণ্ডলের বাড়িতে প্রক্রিয়াকরণ করতো। প্রক্রিয়াকরণের পর হেরোইন পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার বিভিন্ন অংশে সরবরাহ করা হত। অপারেশন চলাকালীন মোট ১৩ কিলোগ্রাম হেরোইন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ৬৫ কোটি টাকা। ৯টি ড্রামে থাকা অপরিশোধিত হেরোইন এবং হেরোইন প্রক্রিয়াকরণে ব্যবহৃত অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান, নগদ টাকা গণনার মেশিন, ওজন যন্ত্র, সিলিং মেশিন এবং অন্যান্য জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

এদিকে, দুটি বাড়িতে এই ধরণের কারবার চললেও সে সম্পর্কে কিছুই জানতেন না বলে জানিয়েছেন, বাবর মণ্ডলের স্ত্রী সাবিনা মণ্ডল। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর স্বামী এবং বড় ছেলে উভয়েই জমিজায়গার কারবার করতেন বলে তিনি জানতেন। একইসঙ্গে তাঁদের একটি মুরগী খামারও রয়েছে। সেই মুরগী খামারেই ড্রাম ভর্তি করে খাবার আসত। বর্ধমানের ২নং জাতীয় সড়কেই সেই ড্রাম নামানো হত এবং তোলাও হত। কিন্তু এর পিছনে যে মারাত্মক হেরোইনের কারবার চলত তা তিনি জানতেন না। অন্যদিকে, জানা গেছে বাবর মণ্ডলের ছেলে রাহুল মণ্ডল বর্ধমানের রাজ কলেজ থেকে প্রায় বছর দুয়েক আগে স্মাতক হওয়ার পরই বাবার সঙ্গে কাজে যুক্ত হয়। বর্ধমান ১নং ব্লক ছাড়াও মঙ্গলকোটের কৈচড় এলাকায় তাঁরা জমি জায়গার কারবার চালাতেন বলে জানা গেছে। এছাড়াও এই দুই জায়গায় মুহুরীরও কাজ করতেন তাঁরা। বিবেকানন্দ কলেজ মোড় এবং গোপাল নগরের দুটি বাড়িতেই লাগানো হয়েছে আগাগোড়া সিসিটিভি। বাড়ির সদস্যদের মধ্যেও ছিল কড়া নজরদারী।

Like Us On Facebook