রবিবার দুপুরে কাকতালীয়ভাবেই প্রায় একই সময়ে পূর্ব বর্ধমান জেলার পৃথক দুটি জায়গায় দামোদরে স্নান করতে নেমে মোট ৭জন তলিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটল। যদিও অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে ৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করলেও ২ জনকে মৃত এবং আরও ২জনের খোঁজ মেলেনি রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত। এর মধ্যে গলসি থানার গোহগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের গোবডাল ঘাটের ঘটনায় উত্তেজিত জনতা ৯টি বালি তোলার মেশিন, ওই মেশিন চালানোর জন্য কয়েকশো লিটার তেল এবং বালিঘাটের অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয়। উত্তেজিত জনতাকে থামাতে বর্ধমান থেকে বিশাল পুলিশ বাহিনী রওনা হয় ঘটনাস্থলে।

অপর্ণা ঘোষ
শৌভিক মণ্ডল

গ্রামবাসীদের সূত্রে জানা গেছে, এপ্রিল মাসে গলসির গোবডালে নিজের গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে আসেন অজয় ঘোষ এবং তাঁর পরিবার। তিনি গুজরাটে একটি ঠিকাদার সংস্থার কর্মী। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, এদিন অজয়বাবুর মেয়ে অপর্ণা ঘোষ (১২) এবং ছেলে মানব ঘোষ (১০) তাদেরই খুড়তুতো ভাই রাণা মণ্ডল (১৩), শৌভিক মণ্ডল (৯) এবং রাজদীপ ঘোষকে (১২) সঙ্গে নিয়ে গোবডাল গ্রামের ওই দামোদরের ঘাটে স্নান করতে যায়। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ওই বালিঘাটে অবৈধভাবে জেসিবি মেশিন দিয়ে পাড়ের কাছাকাছি বালি তোলার জন্য বিশাল বিশাল খাদের সৃষ্টি হয়েছে। আর এদিন সেই রকমি একটি খাদে স্নান করতে নেমে আচমকাই ৫ জন কিশোর ও কিশোরী তলিয়ে যেতে থাকে। তাদের আর্ত চিৎকারে সেই সময় বালিঘাটের শ্রমিকরা ছুটে আসেন। তারাই রানা মণ্ডল, মানব ঘোষ এবং রাজদীপ ঘোষকে জীবন্ত উদ্ধার করে। তলিয়ে যায় শৌভিক মণ্ডল এবং অপর্ণা ঘোষ। এদের মধ্যে শৌভিক মণ্ডল গলসির পুরাতন গ্রাম স্কুলের ছাত্র। অপর্ণা গুজরাটে একটি ইংরাজী মাধ্যম স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী।

ঘটনার পর উত্তেজিত জনতা আগুন ধরিয়ে দেয় বালিঘাটের বালি তোলার প্রায় ৯টি মেশিন সহ ওই মেশিন চালানোর জন্য বালিঘাটের অফিসে মজুদ রাখা তেলেও আগুন ধরিয়ে দেয়। পুড়িয়ে দেওয়া হয় বালিঘাটের অফিসটিকেও। এদিন স্থানীয় গ্রামবাসীরাই উদ্ধার কাজে নামেন। পরে বিকালের দিকে ঘটনাস্থল থেকেই শৌভিক ও অপর্ণার মৃতদেহ উদ্ধার হয়। জীবন্ত উদ্ধার হওয়া রানা মণ্ডল এদিন জানিয়েছে, তারা একসঙ্গেই স্নান করতে নামে। কিন্তু প্রবল স্রোতে আচমকাই শৌভিক এবং অপর্ণা ভেসে যেতে থাকে। তারা সাঁতার জানত না। ডুবে যেতে থাকায় তারা বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকারও করতে থাকে। কিন্তু এরপরই তারা তলিয়ে যায়।

এদিকে, এই ঘটনার পাশাপাশি এদিন জামালপুর থানার বড়টিকরে গ্রামের দামোদর ঘাটে মা ও মেয়ে স্নান করতে নেমে তলিয়ে যাওয়ায় তীব্র চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। বর্ধমান জেলা বিপর্যয় ব্যবস্থাপন দপ্তরের আধিকারিক মৃত্যুঞ্জয় হালদার জানিয়েছেন, এদিন দুপুরে তাঁরা প্রথম খবর পান জামালপুরের বড়টিকরে গ্রামে মা ও মেয়ে স্নান করতে নামে দামোদরে তলিয়ে যায়। খবর পেয়েই ১টি স্পীড বোট সহ ৮জনের ডুবুরি টিমকে সেখানে পাঠানো হয়। কিন্তু রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের কোনো হদিশ মেলেনি। নিখোঁজ মায়ের নাম অরুণা মাইতি (৩৪) এবং মেয়ের নাম ফুলেশ্বরী মাইতি (১৪)। বাড়ি বড়টিকরে গ্রামে। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, এদিন অরূণাদেবী তাঁর শিশুপুত্র এবং কন্যাকে সঙ্গে নিয়েই দামোদরে স্নান করতে যান। শিশুপুত্রকে পাড়ে বসিয়ে রেখে দামোদরে নামেন অরূণাদেবী। এই সময় ফুলেশ্বরীর হাত থেকে জল তোলার একটি পাত্র জলে পড়ে ভেসে যেতে থাকে। সেটি উদ্ধার করতে ফুলেশ্বরী জলে নামলে সে ডুবে যেতে থাকে। মেয়েকে বাঁচাতে মা এগিয়ে গেলে মা ও মেয়ে দুজনেই তলিয়ে যায়। যদিও মৃত্যুঞ্জয়বাবু জানিয়েছেন, গলসীর ঘটনায় ২জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

Like Us On Facebook