প্রি-প্রাইমারি স্কুলের ছাত্রীদের ইংরেজী বইয়ে UGLY(কুৎসিত) বোঝাতে এক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তির ছবি দিয়ে তা বোঝাতে চাওয়ার ঘটনাকে ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ালো বর্ধমান থেকে গোটা রাজ্যে। বৃহস্পতিবার এই ঘটনা নজরে আসতেই পূর্ব বর্ধমান জেলার অন্যতম নামী গার্লস স্কুল বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শ্রাবণী মল্লিক এবং প্রাথমিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা বর্ণালী দাসকে সাসপেন্ড করলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবারই এব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশ জারী করেছেন উচ্চশিক্ষা দফতরের সচীব মণীশ জৈন।

জানা গেছে, চলতি শিক্ষাবর্ষে বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল গার্লস স্কুলের প্রাক প্রাথমিক বিভাগে ছাত্রীদের সরকার অনুমোদিত বইয়ের পাশাপাশি চাইল্ড স্টাডি নামে রুমা রায় লিখিত দি বাণী প্রকাশনের একটি বই পড়ানো হচ্ছিল। আর এই বইয়ে ইংরাজী ইউ(U) অক্ষর সম্পর্কে পড়ুয়াদের পরিচিত করতে আগলি শব্দ লেখা হয়েছে। কিন্তু আগলি অর্থাৎ বাংলা ভাষায় কুৎসিত শব্দের অর্থ বোঝাতে গিয়ে এক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তির ছবি দেওয়া হয়েছে। যার পাশে বাংলায় লেখা হয়েছে কুৎসিত। আর তাই নিয়েই তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে রাজ্য জুড়ে। সম্প্রতি লকডাউন পরিস্থিতিতে বর্ধমান শহরের রামকৃষ্ণপল্লীর বাসিন্দা কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজের অধ্যাপক সুদীপ মজুমদার তাঁর মেয়েকে পড়াতে গিয়ে এই বিষয়টি লক্ষ্য করেন। তাঁর মেয়ে ওই স্কুলের প্রাক-প্রাথমিকের ছাত্রী।

সুদীপবাবু জানিয়েছেন, মেয়েকে পড়াতে গিয়ে দেখি এইসব শেখানো হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি বিষয়টি পূর্ব বর্ধমান জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রাথমিক স্বপনকুমার দত্তকে জানান। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক স্কুলের সঙ্গে কথা বলে বইটি বাতিল করা হবে বলে সুদীপবাবুকে জানিয়েছেন। সুদীপবাবু জানিয়েছেন, এর মাধ্যমে পড়ুয়ারা কি শিখবে? কারণ এই ধরণের পাঠ শিশুমনে কুপ্রভাব ফেলবে। সুদীপবাবু জানিয়েছেন, তিনি এই বিষয়টি নিয়ে ওই প্রকাশনা সংস্থার সঙ্গেও যোগাযোগ করেন। তাঁরা তাঁকে জানিয়েছেন, ওই বইয়ের দ্বিতীয় সংস্করণে এই ছবিটি বাদ দেওয়া হয়েছে। সুদীপবাবু জানিয়েছেন, তিনি প্রকাশনা সংস্থার কাছে আবেদন করেছেন ইতিমধ্যেই প্রথম সংস্করণের এই বইটি যাতে তাঁরা তুলে নেন। প্রকাশনা সংস্থাটি জানিয়েছেন তাঁরা তা করবেন। এদিকে এই ঘটনার বিষয়ে বৃহস্পতিবার কলকাতায় খোদ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় তীব্র নিন্দা করেছেন। এদিনই কলকাতা থেকে সরাসরি এই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শ্রাবণী মল্লিক এবং প্রাক-প্রাথমিকের টিচার ইন-চার্জ বর্ণালী রায়কে সাসপেন্ড করেছেন।

এদিকে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শ্রাবণী মল্লিক জানিয়েছেন, প্রাক প্রাথমিকের একটি বইয়ে কুরুচিকর ইঙ্গিত রয়েছে জানতে পাড়ার পর দ্রুত এই বইটিকে বাতিল করা হয়েছে। যদিও তাঁকে বরখাস্ত করার বিষয়ে তিনি এখন কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন। একই কথা বলেছেন বর্ণালী দাসও। যে প্রকাশক সংস্থা এই বই প্রকাশ করেছে তাদের বিরুদ্ধেও কি পদক্ষেপ নেওয়া যায় তার ভাবনাচিন্তা চলছে বলে জানিয়েছেন উচ্চশিক্ষামন্ত্রী। এই বইটি রাজ‍্যের কোথাও যাতে পড়ানো না হয় সে বিষয়েও নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।

যদিও এদিন পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক বিজয় ভারতী জানিয়েছেন, গোটা ঘটনায় বর্ধমান জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শককে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই দু’জন শিক্ষিকাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, বিষয়ভিত্তিক কোনো শিক্ষিকা ওই বইটি অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করেছিলেন কিনা তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে তাঁর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Like Us On Facebook