তেরো মাসের আইনী লড়াইয়ের পর অবশেষে কালনার চেন কিলার কামরুজ্জামান সরকারকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিলেন পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনা মহকুমা আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক তপন কুমার মন্ডল। গত বছরের ৩০ মে কালনার সিঙ্গেরকোণ এলাকার এক নাবালিকাকে ধর্ষণ ও নৃশংস ভাবে খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলা চলছিল। গত শুত্রুবার ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৪৮ / ৩৭৬এ / ৩০২ এবং পকসো আইনের ৬ ধারায় অভিযুক্ত কামরুজ্জামান সরকারকে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন বিচারক। সোমবার সেই মামলার চূড়ান্ত সাজা ঘোষণা করা হয়।
কালনা আদালত সূত্রে জানা গেছে, ৩০২ ধারায় মৃত্যুদন্ড, ৩৭৬এ ধারায় যাবজ্জীবন, ৪৪৮ ধারায় এক বছরের কারাদণ্ড এবং পকসো আইনের ৬ ধারায় অভিযুক্তের সাজা ঘোষণা করেন বিচারক। পাশাপাশি আদালত সূত্রে জানা গেছে, এই মামলা চলাকালীন ৩৫ জন সাক্ষীর বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে। প্রায় ৫৫টি বাজেয়াপ্ত করা মালপত্র পরীক্ষা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, একা থাকার সুযোগ নিয়ে বাড়িতে ঢুকে কালনার সিঙ্গেরকোণ এলাকার এক নাবালিকা ছাত্রীকে গত বছর ৩০ মে প্রথমে ধর্ষণের চেষ্টা করে কামরুজ্জামান, বাধা দেওয়ায় ওই ছাত্রীকে একটি ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় নৃশংস ভাবে কোপ মারে ও মৃত্যু নিশ্চিত করতে গলায় চেন পেঁচিয়ে ধরে। এরপর নাবালিকা মৃত ভেবে সেই অবস্থায় ফেলে চম্পট দেয় অভিযুক্ত কামরুজ্জামান। আশঙ্কাজনক অবস্থায় নাবালিকা ছাত্রীকে প্রথমে কালনা মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। চিকিৎসা চলাকালীন কয়েকদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ার পর শেষে মৃত্যু হয় ওই ছাত্রীর। এর পরই নড়েচড়ে বসে পুলিশ। শুরু হয় তল্লাশি, খুনিকে ধরতে বিভিন্ন থানায় তথ্য পাঠায় কালনা পুলিশ। শুরু হয় নাকা চেকিং। ২০১৯ সালের ২জুন কালনার কাঁকুরিয়া গ্রামে কর্তব্যরত অবস্থায় দু’জন সিভিক ভলান্টিয়ার সন্দেহজনক এক বাইক আরোহীকে আটক করেন। এরপর বিভিন্ন সিসি টিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে এবং আটক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ উক্ত খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত হিসেবে কামরুজ্জামান সরকারকে গ্রেফতার করে।
এদিন অভিযুক্তের সাজা ঘোষণার পরই পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখার্জী সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, মাত্র ১৩ মাসের মধ্যে অভিযুক্তের সাজা ঘোষণা করেছেন মাননীয় বিচারপতি। অভিযুক্ত কামরুজ্জামান সরকারের বিরুদ্ধে মোট ১৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তারমধ্যে পূর্ব বর্ধমান জেলায় রয়েছে ৮টি মার্ডার কেস। একটি হুগলি জেলায়। ৮টির মধ্যে ২টি ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা রয়েছে। তার মধ্যে সিঙ্গেরকোণ এলাকার এক নাবালিকা ধর্ষণ ও খুনের মামলায় সাজা ঘোষণা হয়েছে। এছাড়াও আরও ৬টি খুনের চেষ্টার মামলা চলছে। তদন্তে জানা গেছে প্রথম দিকে অভিযুক্ত কামরুজ্জামান সরকার শুধু একটি সাইকেলের চেন জড়িয়ে খুনের ঘটনা ঘটালেও পরবর্তীকালে খুনি এই ধরণ পাল্টে ফেলে। পরের দিকে যৌন নির্যাতনের পাশাপাশি ভারী কোন বস্তু দিয়ে মাথায় আঘাত করে গলায় চেন পেঁচিয়ে খুন করতো অভিযুক্ত।