প্রকাশ্য দিবালোকে বর্ধমান শহরে হিন্দি সিনেমার কায়দায় একটি গোল্ড লোন সংস্থায় দুঃসাহসিক ডাকাতি করে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ কেজি সোনা নিয়ে পালালো দুষ্কৃতিরা। বাধা দিতে গিয়ে ওই সংস্থার নিরাপত্তারক্ষী সহ প্রায় ৯জন কর্মীকে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। গোটা ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে শহর জুড়ে। ঘটনাটি ঘটেছে বর্ধমান শহরে বিসি রোডের রূপমহল সিনেমা হল সংলগ্ন এলাকায়।

ওই সংস্থার কর্মী সুরজিত বৈদ্য জানিয়েছেন, এদিন জনা ছয়ের একটি দল পরিকল্পনামাফিক একে একে গ্রাহক সেজে ভিতরে ঢোকে। প্রত্যেকের মাথায় ছিল হেলমেট। ভেতরে ঢুকেই তাঁরা নিজের নিজের পজিশন নিয়ে নেয় সাধারণের মতই। শেষ দুষ্কৃতি ভিতরে ঢুকেই সংস্থার কর্তব্যরত নিরাপত্তারক্ষীকে বেধড়ক মারধর করে বুকে বন্দুকের নল ঠেকিয়ে চুপ করে থাকতে বলে। এই সময়ই বাকি দুষ্কৃতিরা অফিসের কর্মী এবং গ্রাহকদের আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে চুপ থাকতে বলে। অফিসের ম্যানেজারের মুখে আগ্নেয়াস্ত্রের নল ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। মারধর করা হয় অফিসের ৯ জন কর্মীকে। যদিও ইতিমধ্যে ৩বার বিপদসূচক সাইরেন বাজানো হয় বলে দাবি কর্মীদের।

অফিসের কর্মীরা জানিয়েছেন, দুষ্কৃতিদের প্রত্যেকেরই বয়স ৩০-এর মধ্যে। তারা হিন্দি ভাষাতেই কথা বলছিল। অফিসের কর্মীরা জানিয়েছেন, এদিন দুষ্কৃতিরা প্রায় ৩২ কেজি সোনা নিয়ে চম্পট দেয়। সমগ্র ঘটনা ঘটে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ১টার মধ্যে। এদিকে, এই সংস্থায় দুঃসাহসিক ডাকাতি সেরে যখন দুষ্কৃতিরা দোতলা থেকে নীচে নেমে আসতে থাকে সেই সময় ওই সংস্থায় সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে যাচ্ছিলেন হিরামন মণ্ডল নামে এক ব্যক্তি। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে গিয়েই তিনি দুষ্কৃতিদের নামতে দেখেন আগ্নেয়াস্ত্র সমেত। এই সময় তিনি একজনকে জাপটে ধরে ফেলেন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে গুলি চালালেও গুলি কোমড় ছুঁয়ে বেড়িয়ে যায়। দ্বিতীয় গুলিটি লাগে তাঁর বুকপকেটে। কিন্তু সেখানে মোবাইল ফোন থাকায় গুলি বুকে লাগেনি। মোবাইল ফোনটি ভেঙে যায়। এরপরই দুষ্কৃতিরা ছুটে বাইরে বেড়িয়ে এসে মোটরবাইক নিয়ে পালাতে থাকেন। তিনি মোটরবাইকে থাকা একজনকে ধরে ফেলে দেন।

এই সময় স্থানীয় এক দোকানদার বৃদ্ধ তারক বোস তিনিও মোটরবাইকের পিছনের দুষ্কৃতিকে জাপটে ধরে হ্যাঁচকা টান মেরে রাস্তায় ফেলে দেন। এই সময় ফের গুলি চালানোয় তিনি ভয়ে ছেড়ে দেন। এরপরই তারা পালিয়ে যায় বলে তারকবাবু জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, গত ৪০ বছরেও তিনি কখনও বিসি রোডে এই ধরণের ঘটনার কথা শোনেননি। হিরামনবাবু জানিয়েছেন, যখন তিনি এবং বৃদ্ধ তারকবাবু দু’জনে মিলে একজনকে ধরে ফেলেন সেইসময় তার মাথায় বন্দুকের বাট দিয়ে সজোরে আঘাত করা হয়। একইসঙ্গে তাঁকে লক্ষ্য করে ফের ৩ রাউণ্ড গুলি ছোঁড়া হয়। একটি গুলি তাঁর পিঠে লাগে। এরপরই দুষ্কৃতিরা মোটরবাইকে চেপে পালিয়ে যায়। যদিও হিরামনবাবু জানিয়েছেন, দুষ্কৃতিরা মাথায় হেলমেট ও মাস্ক পড়ে থাকায় তিনি কাউকে চিনতে পারেননি।

এদিকে, প্রকাশ্য দিবালোকে জনবহুল বিসি রোডে ডাকাতি এবং গুলি চালানোর ঘটনায় ব্যাপক আতঙ্ক দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে হাজির হন জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় সহ ডিএসপি সৌভিক পাত্র, বর্ধমান থানার আইসি পিণ্টু সাহা। বিসি রোড এলাকায় থাকায় সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ দুষ্কৃতিদের সন্ধানে তল্লাশি শুরু করেছে। পুলিশ আধিকারিকরা এদিন বিসি রোডের দু’পাশে বিভিন্ন দোকানে দোকানে গিয়ে সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করেন। জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ‌্যায় জানিয়েছেন, গোটা জেলা জুড়েই সমস্ত থানাকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। গোটা জেলায় সীমানায় নাকাবন্দি করা হয়েছে। তাঁরা দ্রুত অপরাধীদের ধরার চেষ্টা করছেন। সমস্ত থানার ওসিরাই দুষ্কৃতিদের সন্ধানে নিজের নিজের এলাকায় রাস্তায় নেমে পড়েছেন।

Like Us On Facebook