শনিবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল বর্ধমান শহর। সিপিএম এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় তৃণমূল কংগ্রেসের ১২ জন এবং সিপিএমের ১০ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ কয়েকজনকে আটক করেছে।

নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে শনিবার মহকুমা শাসকের অফিসেও গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেবার জন্য এদিন সকাল থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দেয় শাসক ও বিরোধী সিপিএম, বিজেপি, এসইউসিআই সকলেই। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে মহকুমা শাসকের অফিসের ২০০ মিটারের মধ্যে ব্যাপক পুলিশও মোতায়েন করা হয়। মহকুমা শাসকের অফিসে ঢোকার মুখে বাঁশের ব্যারিকেড তৈরি করা হয়।

অন্যদিকে, এদিন শাসকদলের সমর্থকরাও পাল্টা জায়গায় জায়গায় জমায়েত করে। বিরোধীরা অভিযোগ করেছেন, এদিন সকাল থেকেই বিরোধীরা মনোনয়নপত্র নিয়ে ঢুকতে গেলে তাদের মনোনয়নপত্র কেড়ে নিয়ে মারধের করে তাড়িয়ে দেয় শাসকদল। এদিন দুপুর প্রায় সাড়ে বারোটা নাগাদ বর্ধমানের সিপিএম পার্টি অফিস থেকে বিশাল মিছিল সহযোগে সিপিএমের প্রার্থীদের নিয়ে হাজির হন জেলা নেতারা। মিছিল নিয়ে তাদের ঢুকতে বাধা দেয় পুলিশ। তা নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তিও হয়। পরে পুলিশ প্রার্থীদের ঢোকার ব্যবস্থা করে দেয়। এদিকে, প্রার্থীদের মনোনয়ন কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেবার পরই উত্তেজনা ছড়ানোর অভিযোগে সরব হয় সিপিএম নেতৃত্বরা। পাল্টা প্রতিবাদ করে তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থকরা। এরপরই দুপক্ষের মধ্যে শুরু হয় ব্যাপক সংঘর্ষ। মূহূর্তের মধ্যে গোটা এলাকা রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। দুপক্ষই ইঁট ছুঁড়তে শুরু করে। ছোঁড়া হয় টিউব লাইট। বাঁশ দিয়ে পেটাতে শুরু করে একে অপরকে। ইঁট ও ইলেক্ট্রিক টিউব লাইটের আঘাতে গুরুতর জখম হন বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মী সহ সিপিএম এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থকরা।

ঘটনার খবর পেয়ে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে ছত্রভঙ্গ করে দুপক্ষকেই। এই ঘটনায় পুলিশ বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে। অন্যদিকে, এই ঘটনার পরই দুই মহকুমা শাসকের অফিসে মনোনয়ন কেন্দ্রের মধ্যে ঢুকে পড়ে একদল দুষ্কৃতি। মনোনয়ন কেন্দ্রের মধ্যেই এবং খোদ দুই মহকুমা শাসক ও পুলিশ কর্মীদের উপস্থিতিতেই ব্যাপক সংঘর্ষ ঘটে। কার্যত মারধোর করে, মনোনয়ন কেন্দ্র থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয় প্রার্থীদের। মারের আঘাত থেকে রেহাই মেলেনি মহিলা প্রার্থী সহ তাঁদের সঙ্গে থাকা শিশুরাও।

অন্যদিকে, দফায় দফায় এই সংঘর্ষের পর তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সাধারণ সম্পাদক তথা রায়না কেন্দ্রের জেলা পরিষদ প্রার্থী উত্তম সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, এদিন পরিকল্পিতভাবেই সিপিএম হামলা চালিয়েছে। এই ঘটনায় তৃণমূল কংগ্রেসের বেশ কয়েকজন নেতা ও কর্মী গুরুতর জখম হয়েছেন। এই ঘটনায় সিপিএমের বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে। অপরদিকে, সিপিএমের জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিক পাল্টা অভিযোগ করে জানিয়েছেন, গোটা জেলা জুড়েই তৃণমূল সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছে। এদিন পুলিশের সামনেই তাঁদের প্রার্থীদের ওপর হামলা করা হয়েছে। মনোনয়ন কেন্দ্রের মধ্যে ঢুকে প্রার্থীদের মেরে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে, এরই পাশাপাশি এদিন এসইউসিআই-এর তরফেও শাসকদলের বিরুদ্ধে তাঁদের প্রার্থীদের ওপর হামলা এবং মনোনয়ন জমা দিতে না দেওয়া বিষয়ে বর্ধমান থানায় এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।


Like Us On Facebook