বিধানসভা ভোটের আগেই রীতিমত গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে মুখ পুড়ল পূর্ব বর্ধমান জেলা সদর বিজেপি নেতৃত্বের। কয়েকদিন আগেই বিজেপির সর্ব ভারতীয় সভাপতি জগত প্রসাদ নাড্ডা আনুষ্ঠানিকভাবে বর্ধমানে যে বিজেপির সদর কার্যালয়ের উদ্বোধন করে যান, বৃহস্পতিবার দুপুর প্রায় আড়াইটে থেকে প্রায় আধঘণ্টা ধরে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল বর্ধমান শহরের ঘোড়দৌড় চটি মোড়ের সেই বিজেপির জেলা অফিস চত্বর। খোদ কেন্দ্রীয় নেতা তথা পূর্ব বর্ধমান জেলার বিজেপির পর্যবেক্ষক সাওয়ার ধনিয়ার উপস্থিতিতেই রক্ত ঝরল বিজেপির অফিস চত্বরে। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন অনেক বিজেপি নেতা-কর্মী। গোটা ঝাঁ চকচকে বিজেপির কর্পোরেট ধাঁচের অফিসে চালানো হয়েছে ব্যাপক ভাঙচুর। পোড়ানো হয়েছে ৩টি ছোট হাতি গাড়ি। ভাঙচুর করা হয়েছে বহু মোটরবাইক। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ এখনও পর্যন্ত ৪ জনকে গ্রেফতারও করেছে বিজেপির অফিস চত্বর থেকে।

জানা গেছে, বেশ কিছুদিন ধরেই বিজেপির পুরনো যে সমস্ত কর্মী তাঁরা দলে কোনো গুরুত্ব পাচ্ছিলেন না বলে জেলা থেকে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়ে বৃহস্পতিবার আউশগ্রাম এবং গলসি অঞ্চল থেকে কয়েকশো বিজেপি নেতা-কর্মী পার্টি অফিসে আসেন। অফিসের ভিতরে বৈঠকে ডাকা হয় দেবজ্যোতি সিংহ রায়, পুষ্পজিত সাঁই, রবীন্দ্র গর্গ সহ আরও কয়েকজনকে। এদিন আউশগ্রামের ৫৩ নং জেডপির নেতা নিশিকান্ত মণ্ডল জানিয়েছেন, বৈঠকে দলীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হতেই বিজেপির জেলা সভাপতি সন্দীপ নন্দীর লোকজন তাঁদের মারধর করতে শুরু করেন। এমনকি তাঁদের একটি ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে তালাবন্ধ করে দেওয়া হয়। আগে থেকেই পরিকল্পনা করে এদিন মারধর করা হয় বিজেপি নেতাদের। নিশিকান্তবাবু জানিয়েছেন, কেন ওই সমস্ত নেতা সন্দীপ নন্দীদের বিরুদ্ধে রাজ্যের কাছে নালিশ জানাচ্ছেন তার কৈফিয়ত দাবি করা হয়। আর তারপরেই তাঁদের ওপর চড়াও হন সন্দীপ নন্দীর অনুগতরা। রীতিমত রড, লাঠি, বাঁশ দিয়ে তাদের মারধর করা হয়।

যদিও পাল্টা অভিযোগ করা হয়েছে এই বৈঠক চলাকালীন বিজেপির জেলা সভাপতি সন্দীপ নন্দী সহ কয়েকজন নেতাকেও মারধর ও হেনস্থা করা হয়। ফলে বিজেপির অফিসের ভেতরেই শুরু হয় ব্যাপক গোলমাল। এদিকে, যখন ওই সমস্ত নেতাদের ডেকে অফিসের ভেতর বৈঠকে তাঁদের মারধর করা হয় সেই খবর পার্টি অফিসের বাইরে আসতেই মূহুর্তের মধ্যে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় বিজেপি অফিস। বাইরে থেকে ব্যাপক হারে ইঁট, পাথর ছোঁড়া শুরু হয়। অফিসের সামনের অংশের প্রায় সমস্ত কাঁচই ভেঙে দেওয়া হয়। এই সময় পাল্টা বিজেপি অফিসের তিনতলার ছাদ থেকেও ইঁট, পাটকেল ছোঁড়া শুরু হয়।

উল্লেখ্য, বর্ধমান শহরের জনবহুল জিটি রোডের পাশেই অবস্থিত এই বিজেপির সদর কার্যালয়। দুপক্ষের এই ইঁট বৃষ্টির ঘটনায় ব্যাপক উত্তেজনা ও আতংক ছড়িয়ে পড়ে। এরই মাঝে পার্টি অফিসের সামনে থাকা ৩টি ছোট হাতি গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। এদিন নিশিকান্ত মণ্ডল অভিযোগ করেছেন, ওই গাড়িগুলিতেই এদিন তাঁরা পার্টি অফিসে আসেন আলোচনা করতে। রীতিমত পরিকল্পনা করেই সন্দীপ নন্দীর লোকজন ওই গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, অবিলম্বে সন্দীপ নন্দীকে অপসারণ করা না হলে জেলা বিজেপি বাঁচবে না। তিনি জানিয়েছেন, গোটা জেলায় ২৫০০ বুথ রয়েছে। কিন্তু এখনও ১ হাজারের বেশি বুথে বুথ কমিটিই তৈরি করতে পারেনি জেলা নেতারা। এদিন সেই বিষয় নিয়েও তাঁদের আলোচনায় ডাকা হয়। এদিকে, রণক্ষেত্রের এই খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে হাজির হয় বর্ধমান থানার বিশাল পুলিশ ও র‌্যাফ বাহিনী। রীতিমত লাঠিচার্জ করে উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ। এই সময়ই পুলিশ এদিন নিশিকান্ত মণ্ডল সহ ৪ জনকে গ্রেফতার করে।

Like Us On Facebook