স্বাধীনতার সময়কালে তৈরি হওয়া গলসির উড়ো চটির ডিভিসি ক্যানেলের উপরের ব্রিজ বুধবার সকালে ভেঙে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল প্রায় ১৫টি গ্রাম। প্রায় ১০ বছর আগে এই ব্রিজকে বিপজ্জনক বলে সেচ দফতরের পক্ষ থেকে নোটিশ বোর্ড দেওয়া এবং এই ব্রিজের উপর দিয়ে ভারী যান চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও সেই নিষেধাজ্ঞাকে তোয়াক্কা না করেই চলছিল দেদার ভারী গাড়ির যাতায়াত। বুধবার ইট বোঝাই একটি ট্রাক ব্রিজের উপর দিয়ে যাওয়ার সময়ই ঘটল বিপত্তি। ব্রিজ ভেঙে ট্রাকের পিছনের অংশ ঝুলে থাকল। এই ঘটনায় গোটা এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। ব্রিজের দুই পাশে থাকা অন্তত ১৫ টি গ্রামের মানুষজন দুর্ভোগের মুখে পড়েছেন। বর্ধমান শহরের সঙ্গে যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে সেতুটি ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে। বাধ্য হয়ে এলাকার বাসিন্দাদের তৎপরতায় নৌকো নামানো হয় ডিভিসি ক্যানেলে। জরুরী ভিত্তিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই নৌকো করেই পারাপার করছেন উড়ো, ভুড়ি সহ বিভিন্ন গ্রামের লোকজন।
উল্লেখ্য, প্রতিদিন নিয়ম ভেঙে দেদার যাতায়াত করছিল ইট-বালির গাড়ি থেকে অন্যান্য ভারী যানবাহন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এদিন সকালে একটি ইট বোঝাই ট্রাক এই সেতুর উপর দিয়ে পেরোনোর সময় সেতুর একটি অংশ ভেঙে বসে যায়। সেতুর একটি পিলারও ভেঙে যায়। বড়সড় দুর্ঘটনার হাত থেকে অল্পের জন্য রেহাই পেয়ে যায় ট্রাকটি। সেতুর ভাঙা অংশে লরির পিছনের চাকা বসে গিয়ে আটকে ঝুলতে থাকে। ঘটনার খবর পেয়ে তড়িঘড়ি গলসি থানা থেকে পুলিশ দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে ট্রাকটিকে উদ্ধার করার কাজ শুরু করে। এই সেতু ভেঙে পড়ায় উড়ো থেকে তাহেরপুর-দাদপুর পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার রাস্তায় অনেকগুলি গ্রামের মানুষ ব্যাপক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে।
ভুঁড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সুবোধ ঘোষ জানিয়েছেন, সেচ দফতরের পক্ষ থেকে এই সেতুটিকে অনেক দিন আগেই বিপজ্জনক সেতু বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেতুর পাশে বোর্ডে লেখাও ছিল ভারী যানবাহন চলা নিষিদ্ধ। তবু প্রতিদিনই বেশ কিছু বালির গাড়ি, ইটের গাড়ি যাতায়াত করতো। প্রশাসনকে জানিয়েও বন্ধ হয়নি। এখন এই সেতু ভেঙে যাওয়ায় ভুঁড়ি অঞ্চলের ডালিমগড়িয়া, কালনা, বলনা, ভুঁড়ি, গোমদপুর, রাঘবপুর, ইটারু, দাদপুর, তাহেরপুর প্রভৃতি গ্রাম কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল একদিকে গলসি অন্য দিকে বর্ধমানের সঙ্গে। তিনি জানিয়েছেন, অবিলম্বে এই সেতুর মেরামতের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় পাশেই কাঠের সেতু তৈরি করে নিরাপদ যাতায়াতের বন্দোবস্ত করতে হবে। নাহলে এই সমস্ত এলাকার মানুষকে গলসি যেতে গেলে কালনা বলনার ভিতর দিয়ে শিকারপুর হয়ে দরবারপুর ব্রিজে উঠতে হবে। ঘুর পথে শিকারপুর হয়ে প্রায় আধ ঘন্টা দেরিতে গলসি পৌঁছতে হবে। আবার অন্যদিকে বর্ধমানে আসতে গেলে পূর্ব দিকের সাঁকো ব্রিজ ব্যবহার করতে হবে। এতে প্রায় এক ঘন্টা বেশি সময় লাগবে বর্ধমান পৌঁছতে। গলসি ২ ব্লকের বিডিও সঞ্জীব সোম জানিয়েছেন, সেতু ভাঙার খবর সেচ দফতরকে জানানো হয়েছে। সেচ দফতরের আধিকারিকরা এসে পরিদর্শন করার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তার আগে কিভাবে যাতায়াতের দুর্ভোগ মিটবে তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন উড়ো সহ আশেপাশের গ্রামের কয়েক হাজার বাসিন্দা। যদিও এদিন দুর্ঘটনার কিছু পরেই ভাঙা ব্রিজ মেরামতের কাজ শুরু করেছে সেচ দফতর বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।