২৫ বছর পর নিজের বাড়ি ফিরলেন বছর বিয়াল্লিশের অদ্বৈত বাউরী। বুদবুদের কোটা গ্রামের বাসিন্দা অদ্বৈত বাউরী গত ২৫ বছর আগে এলাকারই এক মহিলার সাথে রাজমিস্ত্রীর জোগাড়ের কাজে কলকাতার উদ্দেশ্যে পাড়ি দেন। কয়েক মাস সেখানে কাজ করার পর পরিবারের সদস্যরা খবর পান অদ্বৈত বাউরী কাজের জায়গা থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে গেছেন। বছরের-পর-বছর পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন এলাকায় তার খোঁজ চালিয়েছিলেন। শেষমেশ দীর্ঘদিন কোন খবর না পেয়ে পরিবারের সদস্যরা ধরে নেন যে অদ্বৈত আর বেঁচে নেই। তাঁকে মৃত বলেই মনে করতেন পরিবারের সদস্যরা ও অদ্বৈতের মা-বাবা।
শুক্রবার হঠাৎই অদ্বৈতকে পানাগড়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। এলাকার কয়েকজন তাঁকে দেখে চিনতে পারেন। আদৌ ওই ব্যক্তি অদ্বৈত কিনা তা নিশ্চিত করতে মোবাইলে ছবি তুলে তা অদ্বৈতের পরিবারের সদস্যদের পাঠানো হলে, পরিবারের সদস্যরা চিনতে পেরে তাঁকে বাড়ি নিয়ে আসেন। বাড়ি ফিরে তাঁর দাদাকে অদ্বৈত জানান, তাঁকে পাড়ার এক মহিলা রাজমিস্ত্রীর জোগাড়ের কাজের জন্য কোলকাতায় নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর তাঁকে কিছুদিন কোলকাতায় কাজ করানোর পর তাঁকে পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও বিভিন্ন রাজ্যে কাজের জন্য নিয়ে যাওয়া হত। দিনের শেষে পরিশ্রমের পর যে টাকাটি পারিশ্রমিক পেতেন, সেই টাকা তুলে দিতেন এলাকার ওই মহিলার হাতে। তাঁকে বলা হত মাসের শেষে তাঁর বাবা-মার কাছে তাঁর পারিশ্রমিক পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার পারিশ্রমিক বাড়িতে পৌঁছে যাচ্ছে ভেবে নিশ্চিন্তে কাজ করতেন অদ্বৈত। কোনভাবেও তাঁকে বাড়ি আসতে দেওয়া হতো না বলে অভিযোগ অদ্বৈতের।
বিভিন্ন রাজ্যে কাজ করতে করতে কয়েকজন রাজমিস্ত্রীর সহযোগিতায় ২৫ বছর পর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয় অদ্বৈত। ২৫ বছর পর কয়েক হাজার টাকা নিয়ে যখন তিনি বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন রাস্তায় সেই টাকা নানান অছিলায় লুট করে নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন অদ্বৈত। এমনকি পানাগড় স্টেশনে নামার পর নিজের বাড়ির রাস্তা চিনতে না পেরে পানাগড় বাজারের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরতে থাকেন তিনি। অবশেষে ২৫ বছর পর নিজের ভাইকে পেয়ে খুশি তাঁর দাদা সহ গ্রামের মানুষ। ২৫ বছর পরিশ্রম করিয়ে ভাইয়ের পরিশ্রমের টাকা যে মহিলা লুট করেছেন এবং মিথ্যা কথা বলে তাঁকে বাড়ি আসতে দেয়নি, সেই মহিলার উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানিয়ে একজোট হয়েছেন গ্রামের মানুষ। তবে ২৫ বছর ধরে যে বাবা-মার জন্য পরিশ্রম করে বাবা-মার সুখের জন্য পরিশ্রমের টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করতেন অদ্বৈত, বাড়ি ফিরে জানতে পারেন, ছেলের অপেক্ষা করতে করতে অসুস্থ হয়ে বছর ছয়েক আগেই মারা গিয়েছেন তাঁর বাবা-মা।