বাংলার বাউল ও ফকিরি গানের টানে আউশগ্রামের জঙ্গলঘেরা গ্রামে বিদেশী শিল্পী, পর্যটক ও গবেষকরা। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া বাউল ও ফকিরি মেলায় সুরের ছন্দে বিশ্বশান্তি ও পরিবেশ রক্ষার শপথ।
বাংলার বাউল ও ফকিরি গান এবং সেই সঙ্গে একেবারে গ্রাম্য মিউজিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্টের মৌলিকত্ব ও তার সুরের জাদু-কে বিশ্বদরবারে তুলে ধরার লক্ষ্যে বাংলা নাটক ডট কমের উদ্যোগে ২০১০ সাল থেকে শুরু হওয়া আউশগ্রামের বননবগ্রামের ‘বাউল ও ফকিরি মেলা’ আজ জমজমাট। শুক্রবার পরিবেশ রক্ষার বার্তা নিয়ে লন্ডনের স্কুল অফ ইকনমিক্সের প্রফেসর তথা নেতাজী সুভাসচন্দ্র বসুর পরিবারের সদস্য অধ্যাপক সুমন্ত্র বসু, লন্ডনের এসেক্স বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক জে. মিত্র ও বাংলা নাটক ডট কমের অধিকর্তা অমিতাভ ভট্টাচার্যের উপস্থিতিতে বাংলার ৫ টি জেলার প্রায় হাজার খানেক বাউল ও ফকিরি শিল্পী এবং লন্ডন, ইটালি, পর্তুগাল, ভিয়েতনাম থেকে আসা শিল্পী, গবেষক ও পর্যটকদের নিয়ে গাছে জল দিয়ে এবং প্রখ্যাত বাউল শিল্পী রাহুল সর্দারের উদ্বোধনী গান দিয়ে সূচনা হয় ‘বাউল ও ফকিরি মেলা-২০২৩’। তিন দিন ধরা চলা এই মেলায় বর্ধমান, নদিয়া, বীরভূম, বাঁকুড়া ও মুর্শিদাবাদ থেকে বাউল ও ফকিরি শিল্পীরা যোগ দেন। একই সাথে বাংলা ও বিদেশী শিল্পীদের যুগলবন্দী দেখতে দুরদুরান্ত থেকে শ্রোতারাও ভিড় জমান আউশগ্রামের অখ্যাত গ্রাম বননবগ্রামে। উদ্যোক্তাদের দাবী, প্রতিদিন কমপক্ষে গড়ে প্রায় ৫ হাজার শ্রোতা ভিড় জমাচ্ছেন এই মেলায়।
বাংলা নাটক ডট কমের অধিকর্তা অমিতাভ ভট্টাচার্য জানান, ২০০৪ সাল থেকে এই সংস্থা বাউল ও ফকিরি শিল্পীদের নিয়ে কাজ করে আসছে। ২০১০ সাল নাগাদ বাংলার এই শিল্প ও তার গুণী শিল্পীদের বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার লক্ষ্যেই এই মেলা আয়োজন করা হয়। মূলত বাংলার ও পাশাপাশি বিদেশী শিল্পীদের মধ্যে শিল্প ও সংস্কৃতির সমন্বয় সাধন, শিল্পের বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্ট ক্রিয়েট করা এবং বাংলার একেবারে মৌলিক যে সমস্ত মিউজিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্ট আছে তা দিয়ে যে সুরের জাদু তৈরী করা যায় তার উন্নয়ন সাধন এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য। সেই প্রচেষ্টায় আমরা কতটা সফল তা দেশ ও বিদেশের শিল্পী, অধ্যাপক ও গবেষকদের এবং তার সাথে কলকাতা সহ সারা বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শ্রোতাদের সমাবেশই তার প্রমাণ।
অধ্যাপক সুমন্ত্র বসু জানান, দেশ বিদেশে বহু সঙ্গীত মেলায় আমি যোগ দিয়েছি, কিন্তু আউশগ্রামের জঙ্গলঘেরা বননবগ্রামের এই মেলার আকর্ষণই আলাদা। বিশ্বজুড়ে যে যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব চলছে একটা বিভেদের প্রাচীর তৈরী করার চেষ্টা চলছে তা একমাত্র ভাঙতে পারে সঙ্গীত। তাই দেশ বিদেশের শিল্পী সমন্বয়ে এই মেলা যেন এই বার্তাও দেয় যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই।