বিশ্বজুড়ে করোনার নতুন স্ট্রেন ‘ওমিক্রন’ ভ্যারিয়েন্টের আতঙ্কের মধ্যেই করোনা প্রতিরোধে চ্যালেঞ্জের মুখে পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন। পূর্ব বর্ধমান জেলায় করোনা টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিতে চূড়ান্ত অনীহায় উদ্বিগ্ন পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন। নির্দিষ্ট সময়সীমা অতিক্রান্তের পরও জেলায় এখনও পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজ নেননি প্রায় ১ লক্ষ ৫৩ হাজার ৫২৪ জন। গত মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনের করোনা সংক্রান্ত টাস্ক ফোর্সের রুটিন বৈঠকে এই উদ্বেগের কথা তুলে ধরা হয়েছে।
তারপরেই রীতিমত কোমড় বেঁধে নামল পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদ। শুক্রবার তড়িঘড়ি জেলার ২৩টি ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, বিডিও এবং ২১৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানদের নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া। তাঁর সঙ্গে এদিন উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাধিপতি দেবু টুডু, জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য ও কারিগরী দফতরের কর্মাধ্যক্ষ বাগবুল ইসলাম, জেলা পরিষদের সচিব, মিশন নির্মল বাংলার আধিকারিকরাও।
সভাধিপতি শম্পা ধাড়া জানিয়েছেন, গত মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনের করোনা সংক্রান্ত টাস্ক ফোর্সের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকেই উঠে আসে জেলায় করোনার প্রথম ডোজ নেওয়ার পর দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার ক্ষেত্রে চুড়ান্ত অনীহা দেখা যাচ্ছে। আর তাই তাঁরা এদিন ভার্চুয়াল বৈঠকের মাধ্যমে সমস্ত জেলার বিডিও, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানদের এব্যাপারে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। গ্রামে গ্রামে এব্যাপারে ব্যাপক প্রচারাভিযান চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গ্রামবাসীদের এব্যাপারে আরও সচেতন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলায় এই ধরণের দ্বিতীয় ডোজের সময়সীমা অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পরও প্রায় ১ লক্ষ ৫৩ হাজার ৫২৪জন দ্বিতীয় ডোজ নেননি। তাই এব্যাপারে তাঁরা জোরদার সচেতনতামূলক প্রচারে নেমেছেন।
অন্যদিকে, জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ বাগবুল ইসলাম জানিয়েছেন, করোনা এখনও চলে যায়নি। এই অবস্থায় কোনোরকম শিথিলতা তাঁরা চান না। এমনকি এখন আবার বুস্টার ডোজ নিয়েও ভাবনা চিন্তা চলছে। বিশেষত, করোনার ভ্যাকসিন নেওয়ার ক্ষেত্রে যাতে কোনোরকম সমস্যা না হয় সেজন্য তাঁরা কাজ করে চলেছেন। করোনার দ্বিতীয় ডোজের কোথাও কোনো অভাব নেই। কিন্তু দেখা যাচ্ছে এই দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা প্রকাশ পাচ্ছে। যদিও এর মধ্যে অনেকেই আছেন যাঁরা পরিযায়ী শ্রমিক, প্রথম ডোজ নেওয়ার পর অন্যত্র চলে গেছেন। এই অনীহার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে তাঁরা লক্ষ্য করেছেন এর একটি কারণ হল – অনেকেই ভাবছেন করোনা কমে গেছে, তাই দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু এই অনীহার ফলে সেই ব্যক্তি নিজের বিপদই বাড়িয়ে তুলছেন। দ্বিতীয় ডোজ নিলেই যে করোনা হবে না, এমনটা নয়। কিন্তু সেক্ষেত্রে দ্বিতীয় ডোজ নিলে তাঁর রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি অনেক বেড়ে যায়। তাই কোনো গাফিলতি নয়, সকলেই যাতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ভ্যাকসিন নেন – সেটাকেই তাঁরা গুরুত্ব দিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৪৩ লক্ষ ১৫ হাজার ১৬২জন প্রথম ডোজ নিয়েছেন।
করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দ্বিতীয় ডোজ নিতে এই অনীহা করোনার বিরুদ্ধে লড়াইকে দুর্বল করে তুলবে বলেই মনে করেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। করোনার চেন ভাঙতে এই দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া অবশ্যই প্রয়োজন বলে স্বাস্থ্যকর্মীরা জানাচ্ছেন। উল্লেখ্য, জেলা প্রশাসন প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা সব থেকে বেশি দেখা গেছে বর্ধমান পুরসভা এলাকাতেই। এখানে দ্বিতীয় ডোজের সময় উত্তীর্ণ হয়ে গেলেও নেননি ৩০ হাজার ৯৬৩ জন। এরপরেই রয়েছে মেমারি ১ নং ব্লক। এখানে ১৫ হাজার ৬১৩ জন এখনও দ্বিতীয় ডোজ নেননি। তৃতীয় স্থানে রয়েছে কালনা পুরসভা। সেখানে ৯ হাজার ১৭৬জন দ্বিতীয় ডোজ নেননি এখনও।