নিজের জীবনের পরোয়া না করে ২৪ বছরের ডুবন্ত এক যুবকের প্রাণ রক্ষা করার জন্য আসানসোলের দক্ষিণা কালী মন্দির সোসাইটি সাহসিকতার পুরস্কার প্রদান করল স্থানীয় যুবক রবি দাসকে। রবির হাতে পুরস্কার তুলে দেন আসানসোল নর্থ থানার ওসি শান্তনু অধিকারী।
ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, গত ১ আগস্ট সুজিত গোস্বামী তাঁর কয়েকজন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে ডিপোপাড়ার একটি পুকুরে স্নান করতে যান। সুজিত সাঁতারে পারদর্শী না হওয়া সত্বেও স্নান করতে পুকুরে ঝাঁপ দেন এবং গভীর জলে তলিয়ে যেতে থাকেন। সুজিতের বন্ধুরা চিৎকার করতে থাকেন। তাঁদের চিৎকার শুনে আশপাশের মানুষজন পুকুর পাড়ে জড়ো হন। কিন্তু কেউই সুজিতকে বাঁচানোর সাহস করেন নি। পুকুরের পাড়ে প্রচুর লোকজন ও চিৎকার শুনে স্থানীয় যুবক রবি দাস ছুটে যান পুকুর পাড়ে এবং জানতে চান কি হয়েছে। ঘটনা শোনা মাত্র রবি পুকুরে ঝাঁপ দেন। রবি সাঁতারে পারদর্শী। ডুব সাঁতার দিয়ে জলের তলায় গিয়ে সুজিতের পা ধরে সুজিতকে টেনে উপরে তোলেন। সুজিত রীতিমত অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তড়িঘড়ি স্থানীয়রা তাঁকে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান। সুজিত ৬ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন। রবির এই সাহসিকতা দেখে স্থানীয় মানুষজন ভূয়শী প্রশংসা করেন রবির। রবির এই সাহসিকতার জন্য আসানসোল দক্ষিণা কালী মন্দির সোসাইটি রবিকে সাহসিকতার পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। রবি খুবই গরীব পরিবারের ছেলে। পেশায় শ্রমিক। সুজিত একটি বেসরকারী সংস্থার কর্মী।
শনিবার সন্ধ্যায় আসানসোল দক্ষিণা কালী মন্দির সোসাইটির পক্ষ থেকে কৃতী ছাত্র-ছাত্রীদের একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এদিন ৫০ জন কৃতী ছাত্র-ছাত্রীকে সংবর্ধিত করা হয়। এছাড়াও বিশেষ সাহসিকতার জন্য রবিকেও পুরস্কৃত করা হয়। দক্ষিণা কালী মন্দির সোসাইটির পক্ষ থেকে গাড়ি পাঠিয়ে রবিকে তাঁর বাড়ি থেকে সসস্মানে আনা হয় অনুষ্ঠান মঞ্চে। পুরস্কার নিয়ে রবি বলেন, আমার খুব ভালো লাগছে এই পুরস্কার পেয়ে। অপরদিকে সুজিত বলেন, সেদিন জলে আমি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ছিলাম। কিভাবে পুকুর থেকে হাসপাতালে গেলাম কিছুই আমার মনে নেই। আমি সারা জীবন রবির কাছে ঋণী থাকব। আমার মাইনের টাকায় জামা-কাপড় কিনে দিয়ে এবার দুর্গা পুজোয় আমি সাড়াটা দিন রবির সঙ্গেই কাটাবো।
এদিন আসানসোল দক্ষিণা কালী মন্দির সোসাইটির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক সলীল কুমার দাস, টিডিবি কলেজের অধ্যক্ষ ড. আশীষ দে, আসানসোল রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের স্বামী সোমাত্মানন্দজী মহারাজ, আসানসোল নর্থ থানার ওসি শান্তনু অধিকারী সহ অন্যান্যরা। আসানসোল দক্ষিণা কালী মন্দির সোসাইটির সম্পাদক মলয় মজুমদার জানান, রবি সহ আসানসোলের কৃতী ছাত্র-ছাত্রীদের সংবর্ধনা ও পুরস্কার প্রদান করে আমরা গর্বিত।