fish-scale10বাঙালির প্রিয় খাদ্য মাছ। সেই মাছের আঁশ শিল্পীর স্পর্শে এখন মহিলাদের গলায় ও কানে অলঙ্কার হিসাবে এবং বাড়িতে শো-পিস হিসাবে শোভা পাচ্ছে। বর্ধমানের মাটি তীর্থ গ্রাউন্ডে মাছের আঁশের তৈরি গহনা ও শো-পিস স্টলে মহিলাদের ভীড় এবং কৃষি মেলায় এসে গহনা কিনতে ব্যস্ত মহিলারা।

দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার হাতিমপুর গ্রামের আমিরুল মল্লিকের হাতের ছোঁয়ায় মাছের সাধারণ আঁশও এখন আসাধারণ হয়ে উঠছে। আমিরুলের বয়স মাত্র আঠাশ বছর। ১৮ বছর বয়সে সে দোয়েল সরকারের কাছে কাজ শেখা শুরু করে সেখানেই কাজ করতে থাকে। কয়েক বছর পর দোয়েল কাজ বন্ধ করে দিলে আমিরুল নিজের প্রতিষ্ঠান শুরু করে। ২০১৫ সালে আমিরুল শিল্পী হিসাবে সরকারি স্বীকৃতি পায়। মাছের আঁশ দিয়ে রাধাকৃষ্ণের মূর্তি তৈরি করে সে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সেরা শিল্পীর পুরস্কারও পায়। এরপর থেকেই তার কাজের সুনাম ছড়াতে থাকে। রাজ্য মৎস্য দপ্তর উদ্যোগি হয়ে তাকে বেশ কিছু সরকারি মেলায় স্টল করার সুযোগ করে দেয়। রাজ্যে এবং রাজ্যের বাইরের বেশ কয়েকটি সরকারি হস্তশিল্প মেলায় সে অংশগ্রহণ করেছে।

তার তৈরি অলঙ্কারের দাম ৩০-২৫০ টাকার মধ্যে। সুন্দর ও পছন্দসই অলঙ্কার সস্তায় মিলছে ফলে তার স্টলে মহিলাদের ভীড় উপছে পড়ে। মাছের আঁশ দিয়ে অলঙ্কার ছাড়াও আমিরুল রাধাকৃষ্ণ, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী, ময়ূর, জোড়া হাঁস ইত্যাদি মূর্তি তৈরি করে।

মাছের আঁশ দিয়ে বিভিন্ন জিনিষ তৈরি করার জন্য আমিরুল মাছের বাজার থেকে রুই, কাতলা ও ভেটকি মাছের আঁশ সংগ্রহ করে। এই আঁশ সংগ্রহের পর
প্রথমে অ্যাসিড ও পরে ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালভাবে পরিষ্কার করে নেয়। তারপর দক্ষ হাতে আঁশের কালো ছোপ তুলে পালিশ করে। এরপর প্রয়োজনমত বিভিন্ন ডিজাইনে কাটিং করে অলঙ্কার ও শো-পিস তৈরি করে। এগুলি তৈরি করতে আঁশ ছাড়াও ফ্যাব্রিক কালার, স্টোন, স্টিল চেন, ভেলভেট, আঠা ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়।

বরখা বিশ্বকর্ম্মা ও তার বান্ধবী নিলম কুরেশি শিলিগুড়ি থেকে মেলায় এসেছিলেন এবং আমিরুলের স্টলে গিয়ে তার শিল্পকর্ম দেখে মুগ্ধ হয়ে অনেকগুলি গহনা কিনে নিয়ে যান। বরখা বিশ্বকর্ম্মা বলেন,”মাছের আঁশ দিয়ে তৈরি এত সুন্দর কাজ আমি আমার জীবনে প্রথম দেখলাম। বেশ কিছু গহনা কিনেই পরে নিলাম”।