৩১ ডিসেম্বর থেকে ইংরেজী বছরের শুরুর দিন গোটা দেশ জুড়ে যখন বর্ষবিদায় আর বর্ষবরণের নানান হুজুগে মত্ত আম জনতা তখন ভগবানই বা বাকি থাকেন কেন? তাই গত ১৫ বছর ধরে বর্ধমান শহরের লাকুর্ডি এলাকায় হয়ে চলেছে আক্ষরিক অর্থে গোপালের বনভোজন মহোৎসব। কার্যত, গত ২৫ ডিসেম্বর থেকেই শুরু হয়েছে গোটা জেলার বিভিন্ন নদীর চড়, বন এলাকায় পিকনিকের ধূম। দামোদর, অজয়, ভাগীরথীর চড়ে চড়ে পিকনিক পার্টির উন্মাদনা চলছেই। আর সেই আবহেই রবিবার রঙবাহারি পোশাকে রাজপুত্রের মতো সেজেগুজে কলকাতাসহ রাজ্যের অন্যান্য জেলা থেকে এই বনভোজনে হাজির শতাধিক গোপাল। বছরের শেষ দিনে নিজেদের পুত্রসম আরাধ্য গোপাল-কে নিয়ে বনভোজন মহোৎসবে মাতলো বর্ধমানের লাকুর্ডি।
বছরের এই সময়টা যখন পরিবার পরিজনদের নিয়ে সকলে বনভোজনে মেতে উঠেন তখন বাড়ির সন্তানসম আরাধ্য গোপালকে বাড়িতে রেখে অনেক সময়ই যাওয়া হয়ে উঠে না গোপালকে স্বস্নেহে দায়িত্ব নেওয়া মা ও বাবার। বাড়িতে রেখে গেলেও মন পড়ে থাকে সেই গোপালের দিকেই। তাই কি আর করা যায় – এই ভাবনা থেকেই ২০০৮ সাল নাগাদ শুরু হয় ‘গোপালের বনভোজন উৎসব’। যা আজ সত্যিই মহোৎসবে পরিণত হয়েছে বলে দাবী উদ্যোক্তাদের।
এই উৎসবের অন্যতম উদ্যোক্তা তপন কুমার সাহা জানিয়েছেন, আজ থেকে ১৫ বছর আগে যখন এই উৎসব শুরু করি তখন থেকেই ব্যপক সাড়া মেলে।করোনার সময় ২ বছর উৎসব করা যায়নি। তাই এই বছর এই উৎসব ১৩ তম বর্ষে পদার্পণ করলো। এবছর কলকাতাসহ রাজ্যের অন্যান্য জেলা থেকেও শতাধিক ‘গোপাল’ তাঁর পরিবার সহ এই উৎসবে যোগ দিয়েছে। প্রায় হাজার খানেক মানুষের উপস্থিতিতে উৎসব পালিত হচ্ছে। বনভোজনের শুরু হয় নামসংকীর্তনের মধ্য দিয়ে তারপরই গোপালদের বরণ করে নেওয়ার পর শুরু হয় ভোগ আরতি। ‘গোপাল’-এর মেনুতে গোপালের প্রিয় ননী, লাবড়া ছাড়াও ছিল অন্ন, বিভিন্ন ধরণের শাক, পাঁচ রকমের ভাজা, মোচা, কচুশাক, বিভিন্ন ধরণের মিষ্টি ও পায়েস আর ভক্তদের জন্য থাকে খিচুড়িভোগ।
কলকাতা থেকে এই উৎসবে যোগ দিতে আসা সমৃদ্ধি সাহা জানিয়েছেন, গোপালের বনভোজন নামটা শুনেই এখানে আসি। আসলে বাড়ির আরাধ্য গোপালকে নিয়ে বনভোজনের এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইনি। কারণ সাধারণত গোপালকে সঙ্গে নিয়ে বনভোজনে যাওয়া হয়ে উঠে না নানান প্রতিকূলতার কারণে। আবার বাড়িতে রেখে গেলেও মন খারাপ হয়ে ওঠে। তাই যখন এই ভাবনার কথা শুনি তখন থেকেই আসার প্রস্তুতি শুরু করি।এখানে এসে খুব ভাল লাগছে। অন্যদিকে, লাকুর্ডির বাসিন্দা সীমা সাহা জানিয়েছেন, আমি বেশ কয়েক বছর ধরেই এই বনভোজনে আসছি। একসঙ্গে শতাধিক গোপালের জন্য আরতি, বরণ ও ভোগ অর্পণ সত্যিই অভাবনীয়, মন ছুঁয়ে যায়।