‘Delayed delivery of second twin’-এর ক্ষেত্রে নজির তৈরী করল বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। একইসঙ্গে এই সাফল্যকে ধরে রাখতে চিকিৎসকদের আবেদন মেনে শিশুর নামকরণও করা হল ‘সাফল্য’। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সুপার ডা. তাপস ঘোষ জানিয়েছেন, জামালপুরের কুলিনগ্রামের বাসিন্দা পম্পা প্রামাণিক তাঁর প্রথম আইভিএফ ফেল হওয়ার পর দ্বিতীয় আইভিএফ করান এবং সেটা সফল হয়। তবে এক্ষেত্রে তাঁর যমজ বাচ্চা হওয়ার কথা ছিল। এমতাবস্থায় ১৭ সপ্তাহ নাগাদ হঠাৎ শারীরিকভাবে অসুস্থতাবোধ করায় গত ১১ জুলাই তাঁকে বর্ধমান হাসপাতালের প্রসূতিবিভাগে ভর্তি করা হয়। ১২ জুলাই প্রিম্যাচিউর অবস্থায় তাঁর একটি বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হয়ে যায়। এখানেই প্রচন্ড চ্যালেঞ্জিং মুহূর্ত তৈরী হয়। কারণ প্রসূতির বয়স প্রায় ৪১ বছর এবং এ ক্ষেত্রে এটা ছিল দ্বিতীয় আইভিএফ। এই রকম পরিস্থিতিতে দ্বিতীয় শিশুকে সুস্থ অবস্থায় মায়ের কোলে তুলে দেওয়াই ছিল তাঁদের কাছে বিরাট চ্যালেঞ্জ। বিশেষত, এক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি প্রতিবন্ধকতাও ছিল। তাপসবাবু জানিয়েছেন, এই ধরণের পরিস্থিতিতে মায়ের শরীরে ইনফেকশনের একশো শতাংশ সম্ভাবনা থাকে। প্রথম শিশু হওয়ার পর দ্বিতীয়ও শিশুও খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশী থাকে। এছাড়াও প্লাসেন্টা বা গর্ভফুলে লিক্যুইড কমে গেলে বাচ্চার বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে এবং অনেক ক্ষেত্রে মাতৃজঠরের বিভিন্ন কর্ডে শিশু জড়িয়ে গিয়েও বিপদ হতে পারত। এই চ্যালেঞ্জকে গ্রহণ করেই বর্ধমান হাসপাতালের স্ত্রী ও প্রসূতি চিকিৎসক মলয় সরকারের নেতৃত্বে ডাক্তার এস. পি সরকার, কৃষ্ণপদ দাস, মুকুট ব্যানার্জী, সুমন্ত ঘোষ মৌলিক ও অর্পিতা প্রামাণিক-দের নিয়ে ১০ সদস্যের মেডিকেল টিম গঠন করা হয়। তাপসবাবু জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে ভূমিষ্ট হয়ে যাওয়া বাচ্চার প্লাসেন্টার কর্ডটিকে ব্লক করে পুনরায় সমগ্র প্ল্যাসেন্টাকে জরায়ুতে স্থাপন করা হয় এবং প্রসূতিকে একটি বিশেষ ওয়ার্ডে স্থানান্তর করে শুরু হয় কঠোর পর্যবেক্ষণ ও চিকিৎসা। এইভাবে প্রায় ১২৫ দিন প্রসূতিকে রাখার পর গত ১৪ নভেম্বর অর্থাৎ শিশু দিবসের দিন ৩৬ সপ্তাহের মাথায় সিজারের মাধ্যমে দ্বিতীয় শিশুর জন্ম হয়। দ্বিতীয় সদ্যজাতের ওজন হয়েছে প্রায় ২ কেজি ৯০০ গ্রাম এবং বর্তমানে সে সুস্থ। চিকিৎসা ব্যবস্থায় এই ধরণের ঘটনা কেবলমাত্র রাজ্য বা দেশ নয়, গোটা বিশ্বের মধ্যে বিরল। সরকারি হাসপাতাল নিয়ে যখন অভাব-অভিযোগের শেষ নেই সেই পরিস্থিতিতে বর্ধমান হাসপাতালের চিকিৎসকদের এই সাফল্যকে কুর্ণিশ জানিয়েছেন প্রসূতির স্বামী পেশায় ব্যবসায়ী অনুপ প্রামানিক। এই বিরল কৃতিত্বকে সম্মান জানাতে ডাক্তারদের কথামত ছেলের নামকরণও করেছেন ‘সাফল্য’।