পাশাপাশি দু’টি মস্ত বড় বাড়ি। একটি হলুদ রঙের। আরেকটি রং-হীন, এই বাড়িতে আবার বেসমেন্টও রয়েছে। ঘটনাচক্রে, এই বাড়ি দু’টির ৪ জন সদস্যের নাম রয়েছে ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায়’! অথচ গ্রামেই এমন অনেক বাড়ি রয়েছে যেগুলি কার্যত ভেঙে পড়ছে, কিন্তু সেই সব বাড়ির মালিকদের নেই নাম আবাস যোজনায়, তাই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন গ্রামবাসীরা। যা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর।
‘রঙ-হীন’ বাড়িটি তৈরি করেছেন পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষের শাঁকারি ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের উপপ্রধান জাহাঙ্গীর শেখ। পাশের হলুদ রঙের বাড়িটি তাঁরই নিকট পরিজনের। প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ব্লকের তালিকায় ৭৩১ নম্বরে রয়েছে উপপ্রধানের স্ত্রী সীমা শেখের নাম। উপপ্রধানের দুই ভাই– আলমগীর ও আজমগীরের নাম রয়েছে যথাক্রমে ৭৩৪ ও ৫৪৩ নম্বরে। উপপ্রধানের সদ্য প্রয়াত বাবা শেখ মহসিনের নাম আছে ৭০০ নম্বরে। এঁদের প্রত্যেকের বাড়ি খণ্ডঘোষের কেশবপুরে। সেখানকার বাসিন্দাদের দাবি, উপপ্রধানদের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভাল ছিল না। ২০১৮ সালে উপপ্রধান হওয়ার পরে অবস্থা পাল্টাতে শুরু করে পেশায় চাল ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীরের। আর ওই বছরেই প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার জন্য সমীক্ষা করে প্রশাসন। সেখানে উপপ্রধানের স্ত্রী-সহ পরিবারের চার জনের নাম উপভোক্তাদের তালিকায় তোলা হয়।
ওই তালিকার থাকা ‘যোগ্য’রা যাতে বাড়ি পান তা নিশ্চিত করতে রাজ্য সরকার একাধিক ব্যবস্থা নিয়েছে। সেই ব্যবস্থার প্রথম ধাপে আশা, অঙ্গনওয়াড়ি, সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়ে গঠিত দল কয়েকদিন আগে সমীক্ষা করতে গেলে তাঁদের নজরে উপপ্রধানের বিষয়আশয় নজরে পড়ে। তাঁরা ব্লক দফতরে রিপোর্টও করেছেন।
উপপ্রধানের দাবি, ‘আমাদের চালাঘর ছিল। ওই অবস্থা দেখে প্রশাসনের কর্তারা সম্ভবত সরকারি অনুদানে বাড়ি পাওয়ার প্রকল্পে নাম তুলে দিয়েছিল। বিষয়টি নজরে আসার পরেই বিডিওকে ফোন করে নাম বাদ দিতে বলেছিলাম।’ তাই বলে একই পরিবারের চারজনের নাম উপভোক্তা তালিকায়? কী ভাবে নাম উঠল, তাঁর ধারণার বাইরে বলে উপপ্রধান জানিয়েছেন।
ওই পঞ্চায়েতের প্রধান শিউলি খাঁয়ের দাবি, ‘সবাই সব কিছু জানেন। এ নিয়ে যা বলার দলকে বলেছি।’ অন্যদিকে উপপ্রধানের এই কীর্তি সামনে আসতেই সরব হয়েছেন দলমত নির্বিশেষে গ্রামের বাসিন্দারা। বিষয়টি নজরে আসতেই তালিকা থেকে উপপ্রধানের পরিবারের ৪ জনেরই নাম বাদ দেওয়া হয়েছে, নতুন তালিকায় তাঁদের নাম নেই বলে জানালেন খন্ডঘোষের বিডিও সত্যজিৎ কুমার।