প্রাথমিক স্কুল থেকেই পুঁথিগত শিক্ষার সঙ্গে কর্মমুখী শিক্ষার মেলবন্ধন ঘটিয়ে গোটা রাজ্যের মধ্যে নজীর গড়তে চলেছে বর্ধমানের কাঞ্চননগরের বেলপুকুর জিএসএফপি বিদ্যালয়। একদিকে যখন সরকারী স্কুলগুলি ছাত্রছাত্রীর অভাবে বন্ধ হতে চলেছে। বাড়বাড়ন্ত ঘটছে বেসরকারি স্কুলের সেই সময় খোদ সরকারি এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ই নজীর গড়ে তুলেছে। স্কুলের প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধূলার সঙ্গে হাতের কাজে রীতিমত তাক লাগিয়ে দিচ্ছে।
স্কুলের বাংলা বিভাগের শিক্ষিকা নিবেদিতা মণ্ডল জানিয়েছেন, তাঁরা লক্ষ্য করছিলেন, ছেলেমেয়েরা পুঁথিগত পড়াশোনা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে কিংবা একঘেঁয়েমির শিকার হয়ে পড়ছে। এই অবস্থা থেকে তাদের বের করে আনতেই স্কুলের সমস্ত শিক্ষক – শিক্ষিকারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে শুরু করেন এই হাতেকলমে জীবনমুখী তথা কর্মমুখী শিক্ষা।
কি সেই শিক্ষা? তিনি জানিয়েছেন, সকাল থেকে পড়াশোনার পর টিফিনের পর আবার কখনও কখনও ছেলেমেয়েদের আগ্রহের জন্য স্কুলের ছুটির পর তাদের নিয়ে শুরু হয় এই কর্মমুখী হাতে কলমে শিক্ষা। একসময় যা পরিচিত ছিল কর্মশিক্ষা হিসাবে। প্রথমে ছেলেমেয়েদের নিজেদের চিন্তাভাবনার ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। তারা কি করতে চায় – সেটা দেখা হয়। তাদের সেই মৌলিক ভাবনার সামান্য ত্রুটি বিচ্যুতি থাকলে তা তাঁরা সংশোধন করে দেন। এরই সঙ্গে তাঁদের নতুন নতুন আঁকা, শিল্পকর্ম, নকশা বোর্ডে এঁকে দেখানো হয়। মজার বিষয় হল – এরকমটা হলেই ছাত্রছাত্রীরা সুনিপুণভাবে সেগুলিকে বাস্তবায়িত করতে শুরু করে। নিবেদিতাদেবী জানিয়েছেন, প্রথাগত শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে এই কাজে ছাত্রছাত্রীদের এই আগ্রহে তাঁরাও উৎসাহিত হয়ে উঠেছেন।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুব্রত কুমার দাস জানিয়েছেন, ভবিষ্যতের কথা ভেবে এবং ছেলেমেয়েদের মধ্যে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টির জন্য এই কর্মমুখী শিক্ষা তাঁরা শুরু করেছেন। এমনকি ছাত্রছাত্রীদের হাতের তৈরি এই সমস্ত কাজকে সংরক্ষণেরও উদ্যোগ নিয়েছেন। স্কুলেই তৈরি করেছেন মিউজিয়াম। সেখানে ছাত্রছাত্রীদের হাতের এই কাজকে রাখা হয়েছে। যা দেখতে আসছেন বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা সহ ছাত্রছাত্রীরা। আসছেন অভিভাবকরাও। সুব্রতবাবু জানিয়েছেন, এই শিক্ষার মধ্যে দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের কোন্ দিকে আগ্রহ তাও তাঁরা বুঝতে পারছেন, সেই বুঝে সংশ্লিষ্ট অভিভাবকদের ডেকে পাঠিয়ে তাঁদেরও তাঁরা বুঝিয়ে বলছেন। এর ফলে আগামী দিনে এই ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের আর্থিক দিক দিয়েও স্বাবলম্বী করে তুলতে পারবে। সুব্রতবাবু জানিয়েছেন, যেভাবে এই স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা এই কর্মমুখী শিক্ষায় আগ্রহী হয়ে উঠেছে – তা দেখেই তাঁরা উদ্যোগ নিয়েছেন এই ছাত্র-ছাত্রীদের হাতের কাজগুলিকে বিপণন করার জন্য। তাঁরা চেষ্টা করছেন বিভিন্ন মেলায় এই ছাত্র-ছাত্রীদের হাতের কাজগুলিকে তুলে ধরতে, বিক্রি করতে। একইসঙ্গে তাঁরা প্রদর্শনী করার কথাও ভাবছেন।
অন্যদিকে, স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী জয়িতা মণ্ডল, পিঙ্কি পাণ্ডে প্রমুখরা জানিয়েছে, এই হাতের কাজ করতে তাদের ভীষণ ভাল লাগে। ভাল লাগে যখন তাদের কাজগুলি মিউজিয়ামে সাজানো থাকে, অনেকে দেখে প্রশংসা করেন।