বর্ষার বৃষ্টির দেখা না মেলায় চলতি খরিফ মরশুমের চাষ নিয়ে দুশ্চিন্তায় চাষীরা। দক্ষিণবঙ্গের চাষীদের এই দুশ্চিন্তায় উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করেছেন খোদ রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ও। সম্প্রতি বর্ধমানে এসে তিনি তাঁর উদ্বিগ্নতার কথা জানিয়ে যান। একইসঙ্গে চাষীদের বাঁচাতে ডিভিসির জলছাড়ারও দাবি করেন। আর চাষীদের এই দুশ্চিন্তাকে মাথায় রেখেই মঙ্গলবার বর্ধমানের কানাইনাটশাল বাংলোয় দক্ষিণবঙ্গের ৫ জেলাকে নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হল। বৈঠকে হাজির ছিলেন বর্ধমান রেঞ্জের ডিভিশনাল কমিশনার বিজয় ভারতী সহ পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া, জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা সহ পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, বাঁকুড়া, হাওড়া ও হুগলি এই পাঁচ জেলার প্রশাসনিক আধিকারিকরা, সেচ দফতরের আধিকারিক এবং জাতীয় জল মিশনের আধিকারিকরাও উপস্থিত ছিলেন।
বিজয় ভারতী জানান, গতবছর খরিফ চাষের জন্য ১৬ জুলাই বৈঠক হয়েছিল। এবারে হচ্ছে ১২ জুলাই। তিনি জানিয়েছেন, বিভিন্ন দফতরের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ৮ জুলাই পর্যন্ত এই ৫টি জেলায় বৃষ্টিপাতের ঘাটতি রয়েছে ৩৫-৪০ শতাংশ। গতবারের তুলনায় অত্যন্ত কম বৃষ্টি হয়েছে বাঁকুড়া ও হুগলি জেলায়। তিনি জানিয়েছেন, আগামী ২২ জুলাই থেকে খরিফ মরশুমের চাষের জন্য জল দেবে ডিভিসি। এবারে জলাধারে জল কম থাকায় প্রথম দফায় ১৪ দিনের পরিবর্তে সাতদিন জল দেওয়া হবে। এবারে বৃষ্টির ঘাটতি এবং জলাধারে সঞ্চিত জলের পরিমাণ কম থাকায় অন্যান্য বারের তুলনায় কম পরিমাণ জল দেওয়া হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে আগামী ২২ জুলাই থেকে সাতদিন মোট ৭০,০০০ একর ফিট জল দেওয়া হবে। এতে এই পাঁচ জেলার ৮,২০,০০০ হেক্টর জমি সেচের আওতায় আসবে। তিনি জানিয়েছেন, আগামী ১০দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তাঁদের কাছে। এই ১০দিনে তাঁদের আশা আশানুরূপ বৃষ্টি হবে। সেক্ষেত্রে প্রবল বৃষ্টি হলে আবার জল ছাড়া বন্ধ করার জন্য পরবর্তী ব্যবস্থাও নিতে হবে। তিনি জানিয়েছেন, আগামী ২৬ জুলাই ফের পর্যালোচনা বৈঠক করা হবে। সেই বৈঠকে বৃষ্টির পরিমাণ, জলাধারে সঞ্চিত জল সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনার পর পরবর্তী জল ছাড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া জানিয়েছেন, গতবছর খরিফ চাষে ২৪ জুলাই থেকে জল ছাড়া হয়েছিল। এবছর পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে ২২ জুলাই থেকে জলা ছাড়া হবে। এরফলে এই ৫ জেলার ৮ লক্ষ ২০ হাজার হেক্টর জমি সেচসেবিত হবে। এবারে যে পরিমাণ জল ছাড়া হবে তাতে মোট চাষযোগ্য এলাকার মাত্র ৪০ শতাংশ পূরণ করা সম্ভব হবে। সভাধিপতি জানিয়েছেন, পূর্ব বর্ধমান জেলায় এবছর মোট ৩ লক্ষ ৭৫ হাজার হেক্টর এলাকায় খরিফের চাষ হবে। কিন্তু ৮ জুলাই পর্যন্ত মাত্র ৪ হাজার ৯৭৭ হেক্টর এলাকায় চাষ করা গেছে জলের অভাবে।