মঙ্গলবার দুপুরে এক বিরল ঘটনার সাক্ষী রইল বর্ধমান শহরের মানুষ। তখন দুপুর ২টো ৩০ মিনিট। আকাশ কালো মেঘে ঢাকা। হঠাৎ বর্ধমানের আকাশ দখল করল ফড়িংয়ের দল। লাখ লাখ ফড়িংয়ে আকাশ ছেয়ে গেল। তারা উদভ্রান্তের মতো উড়ে চলেছিল। অনেকে প্রথমে মৌমাছির ঝাঁক ভেবে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। অনেকেই মোবাইলে ক্যামেরাবন্দী করেন এই অদ্ভুত দৃশ্য। বর্ধমান শহরের রানিসায়ের পাড়ের বাসিন্দা দেবু পাঁজা বলেন, ‘হঠাৎ করে ঝাঁকে ঝাঁকে ফড়িং দেখে বাড়ির দরজা-জানালা সব বন্ধ করে দিই। আমার জীবনে বর্ধমানের আকাশে এত ফড়িং কখনও দেখিনি। এর পিছনে কারণ কি তার ব্যাখ্যা পরিবেশবিদরাই দিতে পারবেন।’
আমরা ফড়িংয়ের যে ছবি পেয়েছি তাতে নীচের দিকে নেমে আসা খুব অল্প সংখ্যক ফড়িং দেখা যাচ্ছে। আকাশে কালো মেঘ থাকায় লাখ লাখ ফড়িংয়ের সেই বিরল ছবি ক্যামেরায় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না। আরও জানা গেছে এদিন ওই সময়ই অনেকের পুরানো বাড়ির ফাটল থেকে দলবদ্ধ ভাবে পিপড়ে বেরিয়ে আসতে থাকে। এইসব অদ্ভুত ঘটনা থেকে মানুষের মনে এক শঙ্কা তৈরি হয়। হঠাৎ এত ফড়িং কোথা থেকে এল? দল দল পিপড়ে কেন বেরিয়ে আসছে? কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস নয়তো?
আশঙ্কাটা শেষ পর্যন্ত সত্যি হল। মঙ্গলবার সকাল ১০টা ২০ মিনিট নাগাদ পশ্চিমবঙ্গের কিছু জেলা সহ পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ভূমিকম্প অনুভূত হল। উৎসস্থল আসামের কোকরাঝাড়। রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ৫.৫। মাটির ১৩ কিলোমিটার গভীরে তৈরি হওয়া কম্পন একদিন আগেই টের পেয়ে গিয়েছিল ফড়িং ও পিপড়েরা।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ভূমিকম্পের আগে ছোট ছোট কম্পন পশুপাখিরা টের পেয়ে যায়। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, ভুমিকম্পের আগে ব্যাঙ এবং বাদুড়ের আচরণ বদলে যায়। এছাড়াও ইঁদুর, মাছ, পাখি, পোকা বিশেষত পিপড়েরা আগে থেকেই বুঝতে পারে এবং নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য নিরন্তর ছুটতে থাকে। আগে যখন পূর্বাভাস দেওয়ার কোন ব্যবস্থা ছিলনা, তখন মানুষ পশুপাখির আচরণ লক্ষ্য করেই অনেক কিছু অনুমান করতে পারত।