‘নীল তিমি’ বা ব্লু হোয়েল গেমের পর দেশ জুড়ে আতঙ্কের নতুন নাম ‘মোমো চ্যালেঞ্জ’। পৃথিবী জুড়ে মোমোর খপ্পরে পড়ে ইতিমধ্যেই ঝরেছে বেশ কিছু তাজা প্রাণ। আর ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গেও দ্রুত ছড়াচ্ছে এই মারণ গেম। হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে আসছে ‘মোমো চ্যালেঞ্জ’-এর আমন্ত্রণ। হোয়াটস অ্যাপকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করায় ঝড়ের বেগে ছড়িয়ে পড়ছে মোমো। স্বভাবতই আতঙ্ক ছড়াচ্ছে মোমোকে ঘিরে। নিস্তার পাওয়ার একমাত্র উপায় সচেতনতা।
কি এই মোমো চ্যালেঞ্জ?
এক জাপানি শিল্পীর আঁকা অদ্ভুত দর্শন একটি মেয়ের ছবিকে প্রোফাইল পিকচার হিসেবে ব্যবহার করে বিভিন্ন বিদেশী নম্বর থেকে হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে এই মারণ গেম খেলার আমন্ত্রণ পাঠানো হচ্ছে। ‘হাই, আই অ্যাম মোমো’ – এই ভাবেই বিভিন্ন বিদেশী নম্বর থেকে হোয়াটস অ্যাপে মেসেজ আসছে। মেসেজের উত্তর না দিলে বা খেলতে না চাইলে ফোন হ্যাক করা সহ খুনের হুমকি আসছে। ফোন হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য চুরি, ব্যাঙ্ক থেকে টাকা লোপাট সহ আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়াই এদের উদ্দেশ্য বলে জানা গেছে।
এই খেলায় খেলার টাস্কগুলো হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে ব্যবহারকারীকে জানানো হয়। যেগুলো বেশিরভাগই ব্যবহারকারীর পক্ষে ক্ষতিকারক। টাস্কগুলো শেষ করে ফোনে রেকর্ড করে মোমোর সংশ্লিষ্ট নম্বরে পাঠাতে বলা হয়। কোন কারণে ব্যবহারকারী যদি টাস্ক কমপ্লিট না করতে পারে বা খেলা ছেড়ে বেরিয়ে যেতে চায় তখন নানাভাবে হুমকি দেওয়া হয়।
নিস্তার পাওয়ার উপায়
মোমোর মেসেজ এলেই সেই নম্বরটিকে হোয়াটস অ্যাপে ব্লক করে দিতে হবে। মোমো চ্যালেঞ্জ খেলার জন্য যাকে মেসেজ পাঠানো হচ্ছে তাঁর নাম, ফোন নম্বর সহ প্রাথমিক কিছু তথ্য এদের কাছে থাকতে পারে। যেগুলো সোশ্যাল মিডিয়া বা ট্রু-কলারের মতো কিছু অ্যাপ থেকে সংগ্রহ করা যেতে পার। তাই শুরুতে মোমোর মেসেজে আপনার নাম, আপনি কি করেন বা কোথায় থাকেন এই ধরণের কিছু তথ্য দেখে ঘাবড়ে যাওয়ার কোন কারণ নেই। যতক্ষণ না কেউ মোমোর পাঠানো কোন লিঙ্কে ক্লিক করছেন বা কিছু ডাউনলোড করছেন ততক্ষণ ফোন হ্যাক হওয়ার সম্ভবনা কম। এই ধরণের লিঙ্কেই লুকিয়ে রয়েছে বিপদ। ভয় না পেয়ে মোমোর মেসেজ পেলেই মেসেজের স্ক্রিনশট সহ পুলিশকে জানান।
এদের পাঠানো লিঙ্কে ক্লিক করলে ফোনে স্পাইওয়্যার ডাউনলোড হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ফোনে থাকা তথ্য চুরি যাওয়া সহ পুরো ফোনের কন্ট্রোল হ্যাকারদের হাতে চলে যেতে পারে। ব্যবহারকারীর অজান্তেই ফোনের ক্যামেরা, রেকর্ডার সহ যাবতীয় সুবিধা হ্যাকাররা চালু বা বন্ধ করতে পারবে। এই ধরণের সমস্যায় পড়লে ফোনের মেসেজ এবং কনট্যাক্ট লিস্টের ব্যাক আপ নিয়ে ফোনটি রিসেট করে নিলে সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।
মোবাইল ব্যবহারে কিছু সতর্কতা
১. বিভিন্ন লোভনীয় অফারের লিঙ্ক দেওয়া হোয়াটস অ্যাপ মেসেজ বা ‘ব্লু লিঙ্কে ক্লিক করে দেখ তোমার জন্য কি অপেক্ষা করছে’ – এই ধরণের হোয়াটস অ্যাপ মেসেজ কিছু না জেনেই আমরা একে অপরকে ফরোয়ার্ড করতে থাকি। এই সব লিঙ্ক দেওয়া হোয়াটস অ্যাপ মেসেজ এড়িয়ে চলাই উচিত। লিঙ্কে ক্লিক করলে অনেক সময় ফোনে অ্যাডওয়্যার বা স্পাইওয়্যার ডাউনলোড হয়ে যেতে পারে।
২. অচেনা নম্বর থেকে মেসেজ এলে নিশ্চিত হয়ে তবেই উত্তর দেওয়া উচিত।
৩. বাচ্চারা মোবাইলে কি করছে বা কি গেম খেলছে, সেদিকে নজর রাখতে হবে। তাদের সচেতন করতে হবে।