টেন্ডার নিয়ে টানাপোড়েন ও ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার কাছে টিকতে না পেরেই ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করেই খুন করা হয়। এমনকি খুনের জন্য লক্ষাধিক টাকার বিনিময়ে নিয়োগ করা হয়েছিলো সুপারি কিলার। আউশগ্রাম ২ নং ব্লকের দেবসালা পঞ্চায়েতের প্রধান শ্যামল বক্সীর ছেলে চঞ্চল বক্সীকে খুনের তদন্তে নেমে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এলে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে। ঘটনায় সরাসরি যুক্ত থাকার অভিযোগে পুলিশ ইতিমধ্যেই তিন জনকে গ্রেফতার করেছে। তাঁদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের পর এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ধৃত তিন জন হল আসানুর মন্ডল, বিশ্বরুপ মন্ডল ওরফে মানু ও মণির হোসেন মোল্লা। এরা প্রত্যেকেই তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী। এরমধ্যে আসানুর মন্ডল ও মণির হোসেন মোল্লা দেবসালা পঞ্চায়েতেরই তৃণমূলের টিকিটে জিতে আসা পঞ্চায়েত সদস্য। বিশ্বরুপ মন্ডল ওরফে মানু হল তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি হিমাংশু মন্ডলের ছেলে ও লবণধার গ্রামের সক্রিয় তৃণমূল কর্মী। পুলিশ সূত্রে আরও জানা গেছে, এরা সকলেই খুনের সাথে সরাসরি যুক্ত, তা তারা পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকারও করেছে। সোমবার ধৃতদের বর্ধমান আদালতে তোলা হয়। ঘটনার সাথে আরও অনেকে জড়িত বলে পুলিশের অনুমান। তাছাড়া খুনের ঘটনায় নিযুক্ত সুপারি কিলারদেরও খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ।

পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে আউশগ্রাম থানার পুলিশ অফিসার ও আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের পুলিশ অফিসারদের নিয়ে গঠিত সিটের তদন্তেই মেলে সাফল্য। মোবাইলের কললিস্ট ও সম্ভাব্য সন্দেহভাজনদের লিস্ট তৈরি করে তদন্ত শুরু করে সিট। একাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। তারপর শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ। এরপরই ধৃত তিনজন পুলিশি জেরায় নিজেদের অপরাধের কথা স্বীকার করে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। ঘটনার দিন ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রটি ও জামাটি ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার আউশগ্রাম ২ নং ব্লকের কার্যকরী সভাপতি আব্দুল লালনের ছেলের আর্শীবাদের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বাবাকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে গেঁড়াই ও ভাতকুন্ডার জঙ্গলের মাঝে গুলিবিদ্ধ হন চঞ্চল বক্সী। বাইকে করে এসে দুষ্কৃতীরা তাঁকে খুব কাছ থেকে গুলি চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। মোট পাঁচ রাউন্ড গুলি চালানো হয় বলে জানান চঞ্চল বক্সীর বাবা তথা দেবসালা পঞ্চায়েতের প্রধান শ্যামল বক্সী। চঞ্চল বক্সীর হাতে, পিঠে ও বগলে গুলি লাগে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে জামতাড়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ঘটনার পরের দিন অর্থাৎ বুধবার পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ সুপারের কাছে খুনের অভিযোগ দায়ের করে চঞ্চল বক্সীর ভাই রাহুল বক্সী। সেই মতো আউশগ্রাম থানায় শুরু হয় খুনের মামলা। এরপরই পুলিশ তদন্ত শুরু করে।

Like Us On Facebook