শেষ হয়ে যাচ্ছে গোটা দেশের মধ্যে রীতিমত আলোড়ন সৃষ্টিকারী কোবরা প্রকৃতির সাপ ঝাংলাই বা ঝঙ্কেশ্বরী। বারবার এই সাপের প্রজাতিকে রক্ষা করার জন্য জেলা থেকে রাজ্য সর্বত্র আবেদন নিবেদন করলেও আজ পর্যন্ত ফল দেখতে পাননি বর্ধমানের ভাতার ও মঙ্গলকোটের ৭টি গ্রামের বাসিন্দারা। সোমবার বড়পোষলা গ্রামে রীতিমত ঘটা করেই পুজো হল দেবী ঝঙ্কেশ্বরীর। স্থানীয় মানুষ এই সাপকে ঝাংলাই বা ঝঙ্কেশ্বরী নামেই দেবী জ্ঞানে পুজো করে আসছেন কয়েকশো বছর ধরেই। কিন্তু আস্তে আস্তে শেষ হয়ে যাচ্ছে এই বিরল কোবরা।
ভাতার এলাকার বাসিন্দা তথা ঝাংলাই নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণারত ধীমান ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, এই সাপকে নিয়ে ইতিমধ্যেই কেবলমাত্র ভারতবর্ষের তাবড় তাবড় গবেষকরাই নয় বিদেশ থেকেও বহু গবেষক এসে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে গেছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত স্বতঃসিদ্ধ কোনো সিদ্ধান্ত তাঁরা জানাতে পারেননি। তবে এটা ঠিকই যে ঝাংলাই কোবরা প্রজাতির অতি বিষধর সাপ। কোবরার অন্য প্রজাতির মতই এদের বিষ ছিটিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। উল্লেখ্য, এই ঝাংলাইকে স্থানীয় গ্রামাবাসীরা মনসা মঙ্গল কাব্যে বর্ণিত কালনাগিনী বলেই মনে করে থাকেন। তাঁরা বিশ্বাস করেন এই কাল নাগিণীই লখীন্দরকে লোহার বাসর ঘরে দংশন করে। বেহুলার ছোঁড়া যাঁতির আঘাতে তখনই লেজের কিছুটা অংশ কেটে যায়। আর এই ঘটনায় কৃষ্ণের অভিশাপে কালনাগিনীর ঠাঁই হয় পৃথিবীর কেন্দ্রস্থলে – এই সাতটি গ্রামকেই পৃথিবীর কেন্দ্রস্থল বলে বিশ্বাস করেন গ্রামবাসীরা।
এলাকার বাসিন্দারা আজও বিশ্বাস করেন মুশারু, ছোটপোষলা,বড়পোষলা, শিকড় তোড়, পলসোনা এবং মইদান এই গ্রামগুলিতেই একদা অবাধ বিচরণ ছিল এই সাপের। পরবর্তী সময়ে কালের নিয়মে কিংবা অন্য সাপের কারণে আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হতে থাকে এই বিরল প্রজাতির কোবরা।
ধীমানবাবু জানিয়েছেন, বর্তমানে পলসোনা, মুশারু, ছোট ও বড় পোষলা গ্রামেই দেখতে পাওয়া যায় এই সাপকে। বিষধর – রয়েছে বিশাল ফণাও। মাথায় গোল চক্রাকারের চিহ্ন। তিনি জানিয়েছে্ন, দীর্ঘদিন ধরে তিনি এই সাপ নিয়ে যে গবেষণা করেছেন তার থেকে তাঁর মনে হয়েছে যেহেতু কাউকে ছোবল মারার আগে সাপ বিষ ছিটিয়ে দেয় পরে কামড়ায়। তাই এই সাপের কামড়ে মারা যাবার কোনো ঘটনা ঘটেনি আজ পর্যন্ত। কারণ আগেই বিষ ছিটিয়ে দেবার পর আর শরীরে বিষ ঢালার মত যথেষ্ট পরিমাণ বিষ থাকে না। যদিও এলাকার গ্রামবাসীরা একে ঐশ্বরিক বলেই দাবি করেছেন। ধীমানবাবু জানিয়েছেন, ঝংকেশ্বরী বা ঝাংলাইকে নিয়ে অনেক গবেষণা হলেও এখনও অনেক বাকি। প্রয়োজন এই সাপের টিস্যুকে নিয়ে গবেষণা। কোবরা প্রজাতির হলেও কেন এই সাপ উগ্র নয় তারও বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা প্রয়োজন পরবর্তী প্রজন্মের জন্যই।
উল্লেখ্য, এই চারটি গ্রামেই বাড়ির মধ্যে, উঠানে, রান্না বা শোওয়ার ঘরেও হঠৎ হঠাৎ দেখতে পাওয়া যায় এই সাপকে। যদিও এলাকার বাসিন্দারা তাতে এখন আর ভীত হন না। ধীমানবাবু জানিয়েছেন, গবেষণা প্রয়োজন কিন্তু তার থেকেও সবার আগে দরকার এই সাপকে সংরক্ষণের। যেভাবে দ্রুত এই সাপের সংখ্যা কমছে তাতে আগামী দিনে এদের অস্তিত্ব কেবল বইয়ের পাতাতেই থেকে যাবে। কিন্তু বারবার আবেদন করেও এখনও কোনো সাড়া মেলেনি সরকারি তরফে।