বর্ধমান পুরসভা এলাকার ১৬নং ওয়ার্ডের মীরছোবা দক্ষিণ এলাকার একটি পরিবার দীর্ঘদিন ধরে অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। অথচ তাঁরা তাঁদের অসহায়তার কথা বারবার জানিয়েছেন স্থানীয় ক্লাব থেকে বর্ধমান পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলর সহ তৃণমূল নেতাদের। কিন্তু সকলেই দেখছি দেখবো করে দিনের পর দিন পাশ কাটিয়ে গেছেন। ফলে বৃদ্ধা রোগাতুর মা আরতি রুইদাসকে নিয়ে কোনোরকমে বেঁচে রয়েছেন বাবু রুইদাস। প্রতিবছর বর্ষার সময় ছিটেবেড়ার ঘরের ভিতর এক হাঁটু করে জল জমে যায়। সেই সময় প্রতিবেশীদের বাড়িতে আশ্রয় নিতে হয় মা ও ছেলেকে। একাধিক রোগে আক্রান্ত বৃদ্ধা মাকে ছেড়ে অন্য কোনো কাজেও যেতে পারেন না ছেলে বাবু রুইদাস। পাড়ারই একটি দোকানে কর্মচারী হিসাবে কাজ করেন। কোনোদিন পান ৫০ টাকা আবার কোনোদিন ৬০ টাকা। আয় বলতে এটাই। তা দিয়েই কোনোদিন ফ্যান ভাত আবার কোনোদিন সবজি ভাত জোটে তাঁদের। তাঁদের এই অসহায়তায় প্রতিবেশীরাও মাঝে মাঝেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন, কিন্তু তাঁরাই বা কতদিন সেটা করতে পারেন। ফলে সকলেই চাইছেন সরকার এতরকম সুবিধা দিচ্ছে, নেতা – মন্ত্রীরা এত বড় বড় ভাষণ দিচ্ছেন, কিন্তু এঁদের পাশে কেউ নেই। নেই রাস্তা, বৈদ্যুতিক আলো। এখনও হ্যারিকেন জ্বালিয়েই রাত কাটাতে হয় এই পরিবারটিকে।
আরতি রুইদাস জানিয়েছেন, প্রায় ১২ বছর ধরে তাঁরা এখানে বসবাস করছেন। একটু বৃষ্টি হলেই ঘরের মধ্যে জল ঢুকে পড়ে। তখন অন্যজনের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিতে হয় তাঁদের। আর্থিক কারণে ঘর মেরামত তো দূর অস্ত নিজের চিকিৎসাও করাতে পারেন নি। হাঁটাচলায় প্রায় অক্ষম বৃদ্ধা এখন চাইছেন তাঁর ছেলের একটা ব্যবস্থা হোক, আর তাঁর মাথা গোঁজার একটা ঠিকমতো ঠাঁই হোক। বাবু রুইদাস জানিয়েছেন, অসুস্থ বৃদ্ধা মাকে ছেড়ে তিনি কোথাও যেতে পারেন না। তাঁর পরিচর্যা করতে হয়। তারই মাঝে পাড়ার ছোট দোকানদার তারক বৈরাগীর দোকানে কাজ করেন তিনি গড়ে প্রতিদিন ৫০-৬০ টাকা পান। তাই দিয়েই কোনোমতে চলে তাঁদের সংসার। তাঁদের এই অসহায়তার কথা বিভিন্ন জায়গায় বারবার জানিয়েছেন। কিন্তু লাভ হয়নি।
প্রতিবেশী বনানী বৈরাগী, আলো বিশ্বাস প্রমুখরাও জানিয়েছেন, বাবুদের কষ্ট চোখে দেখা যায় না। সরকার কিছু করুক এই পরিবারটির জন্য। তাঁদের ঘরের চারিদিকে বড়বড় বাড়ি হয়ে যাওয়ায় ড্রেনেজ সিস্টেম ভেঙে পড়েছে। ফলে সমস্ত জল জমে তাঁদের ঘরে ঢুকে পড়ছে। কয়েকদিন আগেই ধার করে একটি চৌকি কিনে এনেছেন। এখন তার উপরেই রান্নাবান্না, খাওয়া দাওয়া সবই চলছে। বর্ষায় মাঝে মাঝেই ঘরে ঢুকছে সাপও। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, সরকার গরীব মানুষদের জন্য বাংলা আবাস যোজনা সহ একাধিক প্রকল্প চালু করেছেন কিন্তু এই অসহায় পরিবারটা কিছুই পাচ্ছে না। পরিবারকে সব রকমের সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস।