সাড়ে পাঁচবছর বিয়ে হওয়ার পর প্রথম সন্তান হিসাবে কন্যা সন্তান জন্মানোর দায়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন ও পণের বকেয়া না পাওয়ায় শ্বাসরোধ করে এক গৃহবধুকে খুন করার অভিযোগ উঠল। মৃতার নাম রোজিনা বেগম (২৬)। ঘটনাটি ঘটেছে বর্ধমান শহরের গোদায় মৃতার শ্বশুরবাড়িতে। এই ঘটনায় মৃতার বাবা সেখ রবিউল আলি মৃতার স্বামী সেখ মহম্মদ সফিক, শ্বশুর আবুল হাসেম, শাশুড়ী তনসুরা বিবি, ভাসুর মহম্মদ রফিক, দুই ননদ ফতেমা বিবি এবং তাঁর স্বামী গোলাম মণ্ডল এবং সাবিনা বিবি ও তাঁর স্বামী আফগান মণ্ডলের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন বর্ধমান থানায়। ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্তরা পলাতক।
মৃতার বাবা জানিয়েছেন, প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর আগে ৩০ ভরি সোনা, নগদ ৬ লক্ষ টাকা সহ অন্যান্য দানসামগ্রী পণ হিসাবে দেওয়ার চুক্তিতে বিয়ে হয় সেখ মহম্মদ সফিকের সঙ্গে। রোজিনা একাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিল। সফিকের কয়েকটি ইঁটভাঁটা ছাড়াও প্রমোটারি ব্যবসা রয়েছে। পেশায় চাষি রবিউল আলি জানিয়েছেন, রোজিনার একটি ৩ বছরের কন্যা সন্তানও রয়েছে। আর এই কন্যা সন্তান হওয়ায় শ্বশুরবাড়ির লোকজনের গঞ্জনা চলছিলই। এমনকি মাঝে মাঝেই এব্যাপারে তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনও চালানো হচ্ছিল। কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ার অভিযোগে তার ওপর এই নির্যাতনের সঙ্গে যোগ করা হয়েছিল পণের বকেয়া আড়াই লক্ষ টাকা এবং ১০ ভরি সোনার দাবিও। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর মেয়ের ওপর এই অত্যাচারের ঘটনায় ইতিমধ্যেই বারকয়েক তিনি আলোচনায় বসে মীমাংসার চেষ্টাও করেন। তিনি জানিয়েছেন, আস্তে আস্তে তিনি পণের প্রাপ্য মিটিয়ে দেবেন। গত ১৫ দিন আগে ফের ৫ লক্ষ টাকা চায় সফিক। এদিকে, এইভাবে চলার পর বুধবার রাত্রে রোজিনা তার মাকে ফোনে জানায়, সে ভাত রান্না করেছে। তাই কিছু তরকারি পাঠাতে। মেয়ের এই ফোন পেয়ে আমি সাইকেলে মেয়ের জন্য তরকারি নিয়ে সরাইটিকর থেকে গোদায় আসছিলাম। পথে সফিকের এক কাকার সঙ্গে দেখা হওয়ায় তাঁর সঙ্গে কথা বলছিলাম। ইতিমধ্যে ফের রোজিনা তার মাকে ফোনে জানায়, তাড়াতাড়ি তরকারি না পাঠালে তাকে মেরে ফেলা হবে। এরপর রোজিনার মা ফোনে আমায় দ্রুত গোদায় পৌঁছানোর কথা বলেন। রবিউলবাবু জানিয়েছেন, তিনি যখন গোদায় পৌঁছান, তখন দেখেন বিছানার ওপর রোজিনার মৃতদেহ শায়িত রয়েছে। এদিকে, এই ঘটনা সম্পর্কে বর্ধমান থানা সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযুক্তরা পালিয়ে যাওয়ায় তাদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করা হয়েছে।