১১ বছর পর আবার বর্ধমানের কল্পতরু মাঠে সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এক যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু ঘটাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হল। মৃত যুবকের নাম কাইফ মণ্ডল (১৯)। বাড়ি বর্ধমান শহর লাগোয়া কৃষ্ণপুর অঞ্চলে। মৃতের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, এটি কোন দুর্ঘটনা নয়। তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। এই নিয়ে বর্ধমান থানায় তাঁরা একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। যুবকের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে ৩০৪ ধারায় অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে বর্ধমান থানার পুলিশ। মৃত কাইফ মণ্ডল বর্ধমানের ইস্ট ওয়েস্ট মডেল স্কুল থেকে এবারে দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষা দিয়েছে। মাত্র একমাস আগেই সে সাঁতার শিখতে শুরু করে বলে কল্পতরু সাঁতার কেন্দ্রের যুগ্ম সম্পাদক সৌগত হালদার জানিয়েছেন। যদিও এদিন মৃতের আত্মীয় সেখ জাকির হোসেন জানিয়েছেন, কাইফ প্রায় ১ বছর ধরে সাঁতার শিখছিল।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকালে অন্যদিনের মত সকাল ৭টা১৫ থেকে ৮টা ১৫ র ব্যাচে সাঁতার শিখতে এসেছিল কাইফ। অনুশীলন করার সময় তার মুখ দিয়ে ফেনা বের হতে দেখেন উপস্থিত সাঁতার কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। সৌগতবাবু জানিয়েছেন, কাইফ অসুস্থ বোধ করতে থাকলে পুলিশের একটি গাড়ি করে তাকে বর্ধমান হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই সময় তার পালস ছিল বলে সৌগতবাবুর দাবি। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে পরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি জানিয়েছেন, সম্ভবত কাইফ অসুস্থ ছিল। তিনি জানিয়েছেন, এই সুইমিং পুলের জলে ডুবে মৃত্যু সম্ভব নয়। কাইফ এখন রেলিং ধরে অনুশীলন করত। অন্যদিকে মৃতের আত্মীয় শেখ জাকির হোসেন জানিয়েছেন, প্রতিদিনের মত এদিনও কাইফ সাঁতার শিখতে যায়। সকাল ৮টা নাগাদ সুইমিংপুল থেকে তাঁদের খবর দেওয়া হয় তাঁদের ছেলে অসুস্থ। এরপরই তাঁরা দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে দেখেন তাঁদের ছেলে আর বেঁচে নেই। এমনকি কর্তৃপক্ষের কেউ সেখানে নেই। সবাই পালিয়ে গেছে। জাকির হোসেন অভিযোগ করেছেন, এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। তাদের ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগেও ২০১২ সালে ২ সেপ্টেম্বর সাঁতার কাটতে নেমে রমেন সামন্ত (২১) নামে এক যুবক মারা যান। রমেন সামন্তের বাবা দেবকুমার সামন্তের আবেদনে সেই ঘটনার সি বি আই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট ২০১৯ সালের ১৫ মার্চ। ২০১৯ সালের ১৩ জুলাই সিবিআইয়ের ডিআইজি অভয় কুমারের নেতৃত্বে ওই ঘটনার সিবিআই তদন্ত শুরু হয়। মৃত রমেন সামন্তের বাবা দেবকুমার সামন্ত আদালতে সেই সময় জানান, তাঁর ছেলে রমেন সামন্তের দুই বন্ধু আশীষ ভগত ও কৌশিক রায়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার জেরেই তাঁর ছেলেকে খুন করা হয়। ২০১২ সালের পর বৃহস্পতিবার ফের এই সুইমিং পুলে শিক্ষার্থীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা এবং মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে খুন করা হয়েছে বলে দাবি তোলায় নতুন করে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।