রাসায়নিক ছাড়াই মানকরে তৈরি হয় বিশালাকার দুধসাদা কদমা, যা স্বাদ ও ঐতিহ্যে আজও অতুলনীয়। স্থানীয় বিক্রেতাদের দাবি, এক সময় মানকরের কদমা বর্ধমান ছাড়াও বিভিন্ন জেলা সহ বিদেশেও পাড়ি দিত। অন্যান্য জায়গায় যে সমস্ত কদমা পাওয়া যায় তাতে রাসায়নিক মেশানো থাকে। কিন্তু মানকরের কদমা তৈরি হয় চিনি ও ছানার জল দিয়ে কোনওরকম রাসায়নিক ছাড়াই। তাই মানকরের কদমার চাহিদা চিরকাল একই। ৫০গ্রাম থেকে ৭-৮কেজি, যেরকম ওজনের বায়না হয় সেরকম ওজনের কদমা তৈরি করেন মানকরের কদমা প্রস্তুতকারীরা। দুর্গাপুজো, কালীপুজো তো বটেই বিয়ের অনুঠানেও শাড়ি সহ বিভিন্ন জিনিস কদমার ভিতরে ভরে তত্বে পাঠানোর রেওয়াজ রয়েছে বহুদিন ধরে।
বিক্রেতাদের দাবি চিনির দাম, কাঠের জ্বালানি ও পরিশ্রম বাদে এখন আর তেমন লাভ হয় না। তার উপর কোপ বসিয়েছে করোনা। করোনার জেরে সমস্ত পুজো-আর্চা থেকে বিয়ে সহ সমস্ত সামাজিক অনুষ্ঠান, সবকিছুতেই হচ্ছে কাটছাঁট। ফলে ক্রেতা আগের চেয়ে অনেকটাই কমেছে। যার জেরে ব্যবসা প্রায় তলানিতে। ফলে সমস্যায় পড়েছেন মানকরের কদমা প্রস্তিতকারীরা। এভাবে আর বেশীদিন ব্যবসা চালানো যাবে না বলেই মত প্রকাশ করেছেন স্থানীয় কদমা ব্যবসায়ীরা। সারা বছরের পাশাপাশি কালীপুজোর সময় কদমার চাহিদা অনেকটাই বাড়ে, তাই সন্ধ্যা নামতেই বুদবুদের মানকর হাটতলায় কদমা তৈরির ব্যস্ততা দেখা যায়। কিন্তু এবার চাহিদা বিশেষ না থাকায় ব্যস্ততা নেই কদমা প্রস্তুতকারীদের মধ্যে।
মানিক কর নামের এক কদমা প্রস্তুতকারী জানিয়েছেন, তিনি তাঁর বাবার কাছে কদমা তৈরি শিখেছিলেন। বর্তমানে তাঁর ছেলে তাঁকে সাহায্য করে। তবে যেভাবে চিনি আর জ্বালানির দাম বেড়েছে, তাতে কদমার ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে অনেক অনেক অসুবিধা সত্ত্বেও এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। তাঁর দাবি, বাজারে যে সমস্ত কদমা পাওয়া যায় তার স্বাদ আর মানকরের কদমার স্বাদ অনেকটাই আলাদা। সেই কারণেই মানকরের কদমার চাহিদা রয়েছে। বর্তমনে করোনার জন্য বাজার মন্দা রয়েছে। তাও লাভের আশায় এবছরও বেশ কিছু কদমা তাঁরা তৈরি করেছেন।