মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ছাত্রীদের আর্থিক সহায়তা দিতে কন্যাশ্রী ৩-এর ঘোষণা করেছেন। এর ফলে চলতি বছর থেকেই বাংলার হাজারো বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের ছাত্রীরা এই সুযোগের আওতায় আসতে চলেছে। আর মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার পরই রীতিমত খুশিতে ভাসছে বর্ধমানের সায়নী।
এই সায়নীর আবেদনে সাড়া দিয়েই বাংলার ছাত্রীদের জন্য মুখ্যমন্ত্রী এই সুযোগ ও সহায়তার ঘোষণা করেছেন। গোটা বাংলার উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে মেয়েদের মধ্যে উৎসাহ সৃষ্টিকারী সায়নীর গর্বে ভেসে যাচ্ছে গোটা বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁর আত্মীয়স্বজনরাও। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন স্টাডিজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী সায়নী রায়ই এখন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্বের মুখ।
গত শুক্রবার নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে কন্যাশ্রী দিবসে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী উচ্চশিক্ষায় ৪৫ শতাংশ নম্বর পাওয়া ছাত্রীদের উৎসাহ বাড়াতে কলা বিভাগের জন্য ২০০০ টাকা এবং বিজ্ঞান বিভাগের জন্য ২৫০০ টাকা প্রতি মাসে স্কলারশিপ ঘোষণা করেছেন। এর ফলে গোটা বাংলার বহু ছাত্রী উপকৃত হবেন।
কিন্তু ঘোষণার আগে সলতে পাকানোর কাজ করেছিলেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সায়নী রায়। গত ২৯ জুন বর্ধমানের সংস্কৃতি লোকমঞ্চে প্রশাসনিক বৈঠকে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই সভাতেই তিনি ডেকে পাঠিয়েছিলেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের। তাদের জিজ্ঞাসা করেছিলেন কি কি তাদের অসুবিধা হচ্ছে? আর সেই সময় উইমেন স্টাডিজের এই প্রথম বর্ষের ছাত্রী বর্ধমানের মন্তেশ্বরের বাসিন্দা সায়নী বুকে সাহস এনে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছিলেন উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও তিনি যেন কিছু করেন কন্যাশ্রীর মতই।
সায়নীর সেই আবেদনেই সাড়া দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সচীবকে ডেকে এব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু তারপরে কেটে গেছে প্রায় একমাস। উৎকন্ঠায় ছিল সায়নী। মন্তেশ্বরে বাড়ি হলেও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রীতিলতা হোষ্টেলে থেকেই সে পড়াশোনা করছে।
সায়নী জানায়, উচ্চশিক্ষার খরচ জোগাতে না পেরে এবং মেয়েদের ইচ্ছা থাকলেও বাধ্য হয়েই উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন ছেড়ে বসতে হয় বিয়ের পিঁড়িতে। আশপাশের বন্ধু, অন্য মেয়েদের দেখে এই আর্থিক অস্বচ্ছলতার যন্ত্রণাই তাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল। তাই যখন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে যাবার সুযোগ এল। মনে মনে তৈরি আর সাহস সঞ্চয় করেছিলাম। যেভাবেই হোক দিদি’র কাছে বলব – কিছু একটা করুন। খোদ দিদিই তাঁকে সেই সুযোগ এনে দিয়েছিল ২৯ জুন। যার আবেদনের ভিত্তিতে আজ গোটা বাংলার উচ্চশিক্ষার ছাত্রীরা পেতে চলেছে এই সুযোগ। সায়নী জানায়, বর্তমানে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে প্রায় প্রতিটি বিভাগেই ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে মেয়েদের প্রাধান্যই বেশি। খোদ বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়েও এই একই তথ্য। স্বাভাবিকভাবেই মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণায় সকলেই উপকৃত হবেন। একইসঙ্গে প্রত্যেকেই চেষ্টা করবে আরও ভাল ফল করতে। তাতে আখেরে বাংলার শিক্ষাই উন্নত হবে।