২০২২ এর মাধ্যমিকে গোটা রাজ্যের মধ্যে রীতিমত নজর কাড়ল পূর্ব বর্ধমান জেলা। প্রথম থেকে দশম স্থানে আছেন পূর্ব বর্ধমানের মোট ১৩ জন ছাত্রছাত্রী। গোটা রাজ্যের সঙ্গে যুগ্মভাবে প্রথম স্থান অধিকার করল বর্ধমানের সিএমএস হাইস্কুলের ছাত্র রৌণক মণ্ডল। তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৯৩। রৌণক পেয়েছে বাংলায় ৯৯, ইংরেজিতে ৯৮, অঙ্কে ১০০, পদার্থবিদ্যায় ১০০, জীবনবিজ্ঞানে ৯৯, ইতিহাসে ৯৭ এবং ভূগোলে ১০০। রৌণকের বাবা কুন্তল মণ্ডল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। মা সুদীপ্তা মণ্ডল গৃহবধু।
কুন্তলবাবু জানিয়েছেন, এদিন সকাল ৯টা থেকেই তাঁরা টিভির সামনে বসেছিলেন। যদিও অন্যান্যদিনের মতই রৌণক গেছিল টিকরহাটের এক গৃহশিক্ষকের কাছে নিটের কোচিং নিতে। খবর পেয়েই বর্ধমানের গোলাহাট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে ভাড়া বাড়িতে আসে যখন, তখন গোটা পাড়া প্রতিবেশী ভেঙে পড়েছে রৌণকের বাড়িতে। দীর্ঘদিন পর বর্ধমানবাসী প্রত্যক্ষ করল পাড়া প্রতিবেশীর এই উচ্ছ্বাসকে। রৌণকের এই ফলাফলে দীর্ঘক্ষণ ধরে চলল মিষ্টিমুখের পালাও। কুন্তলবাবু জানিয়েছেন, ছোটবেলা থেকেই রৌণকের ইচ্ছা ডাক্তার হওয়ার। স্বাভাবিকভাবেই সেই ইচ্ছা অনুসারেই পরবর্তী পড়াশোনা করবে রৌণক। কুন্তলবাবুর এক ভাই চিকিৎসক। কিছুটা তাঁকে দেখেও অনুপ্রাণিত হয়েছে রৌণক। পড়াশোনার জন্য নির্দিষ্ট কোনে বাঁধাধরা নিয়ম ছিল না রৌণকের। ছিল সমস্ত বিষয়েই গৃহশিক্ষক। পড়াশোনার পাশাপাশি রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি এবং ক্লাসিক্যালের নিয়মিত চর্চা করে রৌণক। সুযোগ পেলেই ভলিবল খেলতে ভালবাসে সে।
রৌণকের পাশাপাশি গোটা রাজ্যে ৫ম স্থান অধিকার করেছে বর্ধমানের বিদ্যার্থী ভবন গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রী সামিয়া ইয়াসমিন। বাবা মহম্মদ গোলাম মারুফ একজন ব্যবসায়ী। মা আয়েষা সুলতানা গৃহবধু। সামিয়ার প্রাপ্ত নম্বর ৬৮৯। সে বাংলা এবং পদার্থবিদ্যায় পেয়েছে ৯৯। ইংরেজি এবং ভূগোলে পেয়েছে ৯৮। অঙ্ক এবং পদার্থবিদ্যায় পেয়েছে ১০০ এবং ইতিহাসে পেয়েছে ৯৫। সামিয়ার প্রতিটি বিষয়েরই গৃহশিক্ষক ছিলেন। তাঁরও পড়াশোনার নির্দিষ্ট কোনো বাঁধাধরা নিয়ম ছিল না। পড়াশোনার পাশাপাশি আঁকতে এবং গল্প বই পড়তে ভালবাসে সে। ভবিষ্যতে ডাক্তার হবার স্বপ্ন থাকলেও সে চায় নতুন নতুন জীবাণু নিয়ে গবেষণা করতে।
সামিয়ার পাশাপাশি বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রী সৃজিতা গোস্বামী ৬৮৮ নম্বর পেয়ে ষষ্ঠ স্থান অধিকার করেছে। সৃজিতা পেয়েছে বাংলা, অঙ্ক এবং পদার্থবিদ্যায় ১০০ নম্বর। ইংরেজিতে ৯৩, ইতিহাসে ৯৬ এবং ভূগোলে ৯৯ পেয়েছে সে। সৃজিতার বাবা দেবাশীষ গোস্বামী বর্ধমানের নবগ্রাম পুলিনবিহারী হাইস্কুলের শিক্ষক। মা নন্দিনী গোস্বামী গৃহবধু। দুই বোনের মধ্যে সৃজিতা বড়। ভবিষ্যতে তার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার ইচ্ছা। সেক্ষেত্রে ইলেকট্রিক বা ইলেক্টনিক্স, রকেট সায়েন্স নিয়ে গবেষণা করার ইচ্ছা রয়েছে তার। পড়াশোনার পাশাপাশি আঁকতে, গান শুনতে কিংবা গল্প শুনতে ভাল লাগে তার। রৌণক, সামিয়া, সৃজিতার পাশাপাশি বর্ধমান শহরের টাউন স্কুলের ছাত্র সৌরথ দে, বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল বয়েজ হাইস্কুলের ছাত্র অঙ্কুর ঘোষ, রাইপুর কাশিয়াড়া মহিপালস দেবী স্মৃতি বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী পায়েল দাস, কাটোয়ার কাশীরাম দাস ইনষ্টিটিউশনের ছাত্র সুরথ ঘোষ এবং আলমপুর হরিমোহন হাইস্কুলের ছাত্রী মৌদীপ ঘোষ ৬৮৫ পেয়ে ৯ম স্থান অধিকার করেছে। বর্ধমান সিএমএস হাইস্কুলের ছাত্র সৌণক ব্যানার্জ্জী, বুজরুকদিঘী হাইস্কুলের ছাত্র সেখ আজাদ, কালনা অম্বিকা মহিষমর্দ্দিনী হাইস্কুলের ছাত্র অঙ্কন ঘোষ, সোন্দলপুর বিরিন্দা দেবী বিদ্যামন্দিরের ছাত্র নিলাদ্রী মণ্ডল এবং মন্তেশ্বর সাগরবালা হাইস্কুলের ছাত্র সোহম কোনার ৬৮৪ পেয়ে দশম স্থান অধিকার করেছে।
এদিকে, গোটা জেলা জুড়ে ছাত্রছাত্রীদের এই সাফল্যের খবর পেয়েই পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া এবং জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ বাগবুল ইসলাম কৃতিদের হাতে ফুলের স্তবক, অভিধান এবং মিষ্টি তুলে দিয়েছেন। জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক রামশংকর মণ্ডল রাজ্যে প্রথম স্থানাধিকারী রৌণক মণ্ডল সহ শহরের কৃতি ৫ জন ছাত্রছাত্রীর হাতে ফুল ও মিষ্টি তুলে দিয়েছেন। এরই পাশাপাশি জামালপুরের তৃণমূল বিধায়ক অলোক মাঝি বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল গার্লস হাইস্কুলের কৃতি ছাত্রী সৃজিতা গোস্বামীকে ফুল ও মিষ্টি দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি মহম্মদ সাদ্দাম কৃতি ছাত্রছাত্রীদের ফুল ও মিষ্টি দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন।