বর্ধমান হাসপাতালের শিশু বিভাগ। আর পাঁচটা দিনের মতোই চরম ব্যস্ততা। ব্যস্ত সকলে। আর এই ব্যস্ততার মাঝেও সময় করে নিয়ে চলছে অন্নপ্রাশনের প্রস্তুতি। কিন্তু কার? কেন এত ব্যস্ততা? জিজ্ঞাসা করতেই মেলে উত্তর। আজ মুন্নির অন্নপ্রাশন। চারিদিকে সাজো সাজো রব। চরম ব্যস্ত ডাক্তার, সিস্টার থেকে শুরু করে নার্স সকলে। সকাল থেকে সাজিয়ে তোলা হয়েছে মুন্নিকে। নতুন জামা কাপড় থেকে ফুলের মুকুট সব মিলিয়ে ঠিক যেন রাজকন্যা মাস সাতেকের মুন্নি।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত ১১ ফেব্রুয়ারি মুন্নি পান্না মানে ছোট্ট মুন্নির মা যখন মুন্নিকে জন্ম দেয় তখন মুন্নির ওজন কম ছিল তাই তাকে হাসপাতালের এসএনসিইউতে ভর্তি করা হয়। তারপর দু-একদিন মুন্নির মা সময় করে মুন্নির কাছে এলেও পরে আর খোঁজ পাওয়া যায়নি তার। হাসপাতালে দেওয়া ঠিকানাতে পাওয়া যায়নি তাকে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়েই পুলিশেও অভিযোগ করে। কিন্তু তা কি আর মুন্নি জানতো। সে তার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই খিদে পেলে উঠতো কেঁদে। আর কর্তব্যরত সিস্টারদের বারবার মাইকে মুন্নির মায়ের খোঁজে ডাক। কিন্তু মুন্নির মায়ের খোঁজ মেলে না। তখন সিস্টার ও নার্সরাই এগিয়ে আসেন মুন্নির দেখভালে। আর সেই থেকেই ‘baby of Munni Panna’ তাঁদের কাছে হয়ে উঠে শুধুই মুন্নি। কেউ কেউ আবার নতুন নামও রাখেন আদর করে।
গত ৬ মাস ধরে এরাই হয়ে ওঠেন মুন্নির আপনজন। কখনও রিয়া বিশ্বাস তো কখনও রেখা মন্ডল এই ভাবে এখন গোটা বিভাগের প্রায় ২৪ জন সিস্টার ও নার্সদের আদরেই মানুষ হচ্ছে মুন্নি। আর তাই ৬ মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পরই নিয়ম অনুযায়ী তাকে ঘরোয়া খাবারে অভ্যস্ত করতেই সকলে সিদ্ধান্ত নেন মুন্নির অন্নপ্রাশনে। যেমন ভাবনা তেমনি কাজ। সকালবেলায় সর্বমঙ্গলা মন্দিরের প্রসাদ খাওয়ানোর পর শুরু হয় অন্নপ্রাশনের পর্ব। মেনুতে ভাত, ডাল, শাক, আলুপস্ত ও পায়েশ। সকলের হইহুল্লোর, আনন্দ ও আদর এতোকিছুর মাঝেও কোথাও যেনো একটা অভাব ছোট্ট মুন্নির। মা কি আসবে। দুচোখ জুড়ে কেবল জিজ্ঞাসা। অন্যদিকে নিয়ম অনুযায়ী মুন্নিকে এবার তুলে দিতে হবে চাইল্ড লাইনের হাতে এটা ভেবেই মন খারাপ সকলের।