ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই বিধানসভা ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশ হতে পারে এমনটা ধরে নিয়ে যখন সমস্ত রাজনৈতিক দলই নিজেদের মতো গুটি সাজাচ্ছেন সেই সময় গত ২১ জানুয়ারি বর্ধমান সদর বিজেপি কার্য্যালয়, বিপ্লবী রাসবিহারী ঘোষের নামে নামাঙ্কিত ভবনে বিজেপি নেতা কর্মীরা ব্যাপক ভাঙচুর এবং এক গোষ্ঠী অন্য গোষ্ঠীর উপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ। যা নিয়ে গোটা রাজ্য জুড়েই ব্যাপক চাঞ্চল্য শুরু হয়। আদি বনাম নব্য বিজেপি কর্মীদের মধ্যে এই বিবাদে রীতিমত সাজানো গোছানো বিজেপির এই কার্য্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালানোর ঘটনায় মুখ পোড়ে জেলা নেতৃত্বের। দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রাজপথে এসে আছড়ে পড়ে। গোটা বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতে ছুটে আসেন রাজ্য নেতারাও। তাঁরা সংবাদ মাধ্যমের কাছে এই ঘটনার দায় তৃণমূলের ঘাড়ে নির্দ্বিধায় চাপিয়ে দেন।
কিন্তু এই ঘটনার পিছনে অন্য কোনো শক্তি নয়, সরাসরি দলের অন্তর্কলহকেই দায়ী করে রবিবার জেলার মোট ১৪ জন নেতাকে শোকজ চিঠি ধরিয়ে দিয়েছে রাজ্য নেতৃত্ব। যা নিয়ে রবিবার রাত থেকেই নতুন করে চর্চা শুরু হয়েছে জেলা জুড়ে। কারণ রবিবার সন্ধ্যায় দলের রাজ্য সহ সভাপতি (ইলেকশন ইনচার্জ) প্রতাপ ব্যানার্জ্জী শোকজ চিঠিতে জানিয়েছেন, ২১ জানুয়ারি দলের সমস্ত শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে যেভাবে পার্টি অফিসে হামলাবাজি করা হয়েছে তাতে দল কড়া ব্যবস্থা নিতে চলেছে। বিজেপি পার্টির সংবিধানের ২৫এ এবং ২৫সি ধারা অনুসারে আগামী ৭দিনের মধ্যে এই শোকজের যথাযথ জবাব না দিলে দল তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। প্রয়োজনে তাঁদের দল থেকে বহিষ্কার করারও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। আর রবিবার রাতে এই শোকজের ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই শুরু হয়ে যায় নতুন করে চাঞ্চল্য।
বিজেপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২১ জানুয়ারির এই ঘটনায় শোকজ চিঠি পাঠানো হয়েছে খোদ বিজেপির বর্ধমান সদর জেলা কমিটির সভাপতি সন্দীপ নন্দী সহ কেশবচন্দ্র কোনার, বিশ্বজিত দাস, লক্ষ্মীকান্ত দাস, উত্তম চৌধুরী, স্মৃতিকান্ত মণ্ডল, রবীন্দ্র গর্গ, পুষ্পজিত সাঁই, দেবজ্যোতি সিংহ, বিজয় ধারা, সাগ্নিক শিকদার, খোকন সেন, গৌড় মল্লিক এবং নন্দন সিংহকে। বস্তুত, এই শোকজ চিঠিতে কোথাও বলা হয়নি বাইরের বিশেষত তৃণমূল কংগ্রেসের কেউই এই হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল। অন্যদিকে, বিধানসভা ভোটের মুখে এই শোকজ চিঠিকে ঘিরে রীতিমত বেকায়দার মুখে জেলা বিজেপি। এব্যাপারে বিজেপির কোনো নেতাই মুখ খুলতে না চাইলেও শোকজ চিঠি পাওয়া এক নেতা জানিয়েছেন, এটা তাঁদের পক্ষে শাপে বর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই চিঠির উত্তর হিসাবে তাঁরা তাঁদের বক্তব্য রাজ্য নেতৃত্বের কাছে জানানোর সুযোগ পেয়ে গেছেন।