বৃহস্পতিবার থেকে গোটা রাজ্য জুড়ে সরকারি ও বেসরকারি বাস ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে চলাচলের ছাড়পত্র দেওয়া হলেও কার্যত এদিন দুই বর্ধমানে সামান্য কিছু সরকারি বাস চললেও বেসরকারি বাসের দেখা পেলেন না যাত্রীরা। ফলে রীতিমত দুর্ভোগের মুখে পড়েন এদিন রাস্তায় বের হওয়া সাধারণ যাত্রীরা। পেট্রোল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির জন্যই বাস চালানো সম্ভব হচ্ছে না বলে জানাচ্ছেন বাস মালিকদের সংগঠনগুলির প্রতিনিধিরা। বৃহস্পতিবার দেখা গেল দুর্গাপুরের সমস্ত মিনি বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। আগামী শনিবার পাঁচটি মিনিবাস সংগঠন বৈঠকে বসে বাসভাড়ার চার্ট তৈরি করবে এবং তা সরকারের কাছে পেশ করে নতুন ভাড়া চালুর দাবি রাখবে। তারপর বাস চলাচল হবে কিনা তা জানানো হবে বলে জানা গেছে। দুর্গাপুর মিনিবাস সংগঠনের এক কর্তা কাজল দে বলেন, ‘বর্তমানে ডিজেল ৯১ টাকা প্রতি লিটার। কিভাবে পুরানো ভাড়ায় আমরা মিনিবাস চালাবো? বাসভাড়া না বাড়ালে কোনভাবেই বাস চলানো সম্ভব নয়।’ কাজলবাবু আরও বলেন, ‘আমরা মিনিবাসের নুন্যতম ভাড়া ১৫ টাকা করতে চাই। এরপর কিলোমিটার প্রতি ৮০ পয়সা বা ১ টাকা করার দাবি রাখছি প্রশাসনের কাছে। যদি ইতিবাচক সাড়া মেলে তাহলে সোমবার থেকে ফের মিনিবাস চলবে দুর্গাপুর শহরে।’
এদিন হুগলীর বৈঁচির বাসিন্দা বিনয় ঘোষ বর্ধমানে এসেছিলেন কাজে। কাজ সেরে ফিরে তিনি প্রায় দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করেও আলিশা বাসস্ট্যাণ্ডে কোন বাসের দেখা পাননি। জানিয়েছেন, রীতিমত হয়রানির মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে। সরকারি ঘোষণা শুনেই তিনি বাড়ি থেকে বেড়িয়েছিলেন কিন্তু কার্যত রাস্তায় কোন বাসের দেখাই তিনি পাননি। একই অবস্থার শিকার হয়েছেন গলসির বাসিন্দা সেখ সাগর আলি। তিনি জানিয়েছেন, এদিন তিনি ২নং জাতীয় সড়কের পাশে একটি বেসরকারি হাসপাতালে রোগীর কাছে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে বাড়ি ফিরতে তিনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও বাস পাননি।
সরকারি ঘোষণা হলেও কার্যত বাস মালিকরা বাস চালানোর সাহস দেখাতে পারেননি। এদিন বর্ধমান টাউন সার্ভিস বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক সিদ্ধার্থ পাল জানিয়েছেন, সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী তাঁরা বুধবারই সংগঠনের বৈঠক করে সমস্ত মালিককে বাস চালানোর কথা জানিয়ে দেন। এদিন সকালে গোটা পাঁচেক বাস চলেও। কিন্তু কোন যাত্রী না মেলায় তাও বন্ধ করে দিতে হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, লকডাউনের জেরে ট্রেন বন্ধ, বন্ধ সমস্ত স্কুল, কলেজ, প্রতিষ্ঠান, বাজার। ফলে বাইরের লোক আসতে পারছেন না। একইসঙ্গে বর্ধমান শহরের মধ্যে দিয়ে বাইরের রুটের বাস যাতায়াত বন্ধ থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। ফলে সবদিক থেকে তাঁরা মার খাচ্ছেন। তিনি জানিয়েছেন, একবার বাস চালালে তাঁদের যে জ্বালানি খরচ হয় সেই টাকাও তোলা যাচ্ছে না যাত্রীর অভাবের দরুণ। ফলে বাধ্য হয়েই তাঁরা বাস বন্ধ করে দিয়েছেন। তবে তাঁরা আশাবাদী রাজ্য সরকার তাঁদের ট্যাক্স, জিএসটি প্রভৃতি বিষয় নিয়ে কিছু ছাড় দিলে তাঁদের আর্থিক লোকসান কমবে। একইসঙ্গে বাসের ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টিও অত্যন্ত জরুরী। এখন বর্ধমানে বাসের ন্যূনতম ভাড়া ৮ টাকা। অথচ টোটোর ভাড়া ১০ টাকা। ফলে অনেকেই বাসের পরিবর্তে টোটোয় কাজ সেরে ফেলছেন। এই বিষয়টি নিয়েও সরকারের ভাবা দরকার। নাহলে গোটা বাস পরিষেবাই ধ্বংস হয়ে যাবে।