বানভাসি বর্ধমান শহর। জল নিষ্কাশনের বিকল্প পথ না থাকা এবং বাঁকা নদীর জল উপচে বর্ধমান শহরে বাঁকা নদীর তীরবর্তী একাধিক ওয়ার্ডে ঢুকে পড়ায় গত ৩ দিন ধরে জলবন্দি পুর এলাকার একাধিক ওয়ার্ডের সাধারণ নাগরিকরা। কখনও পুরসভার উপর আবার কখনও জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল উঠতে শুরু করেছে। গত কয়েকদিনের প্রবল বৃষ্টিতে গোটা জেলায় এখনও তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতির খবর না আসলেও খোদ বর্ধমান পুর এলাকার বেশ কিছু এলাকা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। লাগাতার বৃষ্টি এবং বাঁকা নদীর জলে ভেঙেছে একাধিক কাঁচাবাড়ি সহ পাকা বাড়িও। এখনও পর্যন্ত ৫০০-রও বেশি মানুষকে বিভিন্ন নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিন দুপুর পর্যন্ত পাওয়া জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, আপার ক্যাচমেণ্ট এলাকায় ব্যাপক বৃষ্টির জেরে দুর্গাপুর ব্যারেজের জলও বেড়েছে। ফলে ধীরে ব্যারেজ থেকে জল ছাড়ার পরিমাণও বাড়ানো হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত ২০ জুলাই থেকে আমন চাষের জন্য জল ছাড়া শুরু হয়েছে। তার পরেই নিম্নচাপের জেরে লাগাতার বৃষ্টিতে ব্যারেজের জল ছাড়াও শুরু হয়েছে। এদিন দুপুর পর্যন্ত দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে ৫৬ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে, বর্ধমান পুরসভার ২১ ও ২৫ ওয়ার্ডের রাজগঞ্জ এলাকায় প্রায় ২০০ পরিবার জলবন্দি হয়ে পড়েছেন। ১৭নং ওয়ার্ডের খাজা আনোয়ার বেড় এলাকায় কয়েকটি মাটির বাড়ি ভেঙেছে। বর্ধমান পুরসভার ২নং ওয়ার্ডের সুভাষপল্লী এলাকাও জলমগ্ন হয়ে পড়ায় সংকটে পড়ছেন এলাকার বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবার বর্ধমান শহরের ইছলাবাদ কাঠের পুল এলাকায় একটি পাকা বাড়ির একাংশ বাঁকা নদীর জলে ভেঙে পড়ে।

এদিকে, গোটা শহর জুড়েই জায়গায় জায়গায় জলবন্দি মানুষকে একদিকে উদ্ধার করে তাঁদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া এবং বৃহস্পতিবার থেকে দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিলি শুরু করে দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীরা। তৃণমূল যুব কংগ্রেসের জেলা সভাপতি রাসবিহারী হালদারের নেতৃত্বে, শহর যুব সভাপতি শুভায়ু সাহা, শহর তৃণমূল কংগ্রেসের জয়হিন্দ বাহিনীর সভাপতি পল্লব দাস প্রমুখরা এদিন ১৯, ২১, ১১, ১২ এবং ১৭ নম্ব ওয়ার্ডের জলমগ্ন এলাকা ঘুরে দেখে ত্রাণের ব্যবস্থা করেন। ২০নং ওয়ার্ডের ইন্দিরাপল্লী এবং পূর্বাশাপল্লী বস্তি এলাকায় অসংখ্য পরিবার জলমগ্ন হয়ে পড়ায় তাঁদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এদিকে, পুর এলাকা তথা বর্ধমান দক্ষিণ বিধানসভা এলাকায় বৃহস্পতিবার থেকেই ভোটের জন্য যেভাবে চষে বেড়িয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী খোকন দাস, ঠিক সেভাবেই বিধায়ক খোকন দাস চষে বেড়ালেন একাধিক এলাকা। প্লাবিত এলাকায় হেঁটে বাড়ি বাড়ি খোঁজ খবর নিলেন। গেলেন ত্রাণশিবিরগুলিতেও। এরই পাশাপাশি এদিন ২নং জাতীয় সড়কের কুড়মুনা চন্দনপুর মোড় এলাকায় আন্ডারপাস জলমগ্ন হয়ে পড়ায় চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন এলাকার মানুষজন। প্রতিবাদে শুক্রবার বেশ কিছুক্ষণ জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভও দেখান। এই ঘটনায় দুর্গাপুর-কলকাতা ও কলকাতা-দুর্গাপুরমুখী সমস্ত যান চলাচল ব্যাহত হয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় বর্ধমান থানার পুলিশ। গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনার পর অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।

এদিকে, বর্ধমান পুরসভার পাশাপাশি ডিভিসি ক্যানেলের জলে প্লাবিত হয়েছে বেলকাশ গ্রাম পঞ্চায়েতের একাধিক এলাকা। জলমগ্ন হাজার হাজার বিঘে ধান জমি। ফলে চাষের ক্ষতির আশংকায় ভুগছেন চাষীরা। গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে এলাকায় যান জেলা পরিষদের সদস্য নুরুল হাসান। একইভাবে বর্ধমান ১নং ব্লক এবং বর্ধমান ২নং ব্লকের একাধিক এলাকায় বাঁকা নদীর জল ঢুকে সাধারণ জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। প্রবল বৃষ্টি এবং বাঁকার জল ঢুকে পড়ায় একাধিক কাঁচা বাড়ি ভেঙে পড়েছে।

Like Us On Facebook