বর্ধমান আদালতের লকআপ থেকে ভরা দুপুরে জনসমক্ষেই উধাও হয়ে গেল কুখ্যাত অস্ত্র, মাদকপাচারকারী ও সুপারি কিলার টনটন মিশ্র ওরফে বাবা ওরফে পণ্ডিতজী। এই ঘটনায় এদিন দুপুর থেকে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র আদালত চত্বর জুড়ে। লকআপের পরিকাঠামো, সুরক্ষা কিংবা লকআপের পাহারাদারদের নিয়েও প্রশ্ন ওঠে গেল।

৩ এপ্রিল কুলটি থানার পুলিশের হাতে ধৃত টনটন মিশ্র

জানা গেছে, শুক্রবার দুপুরে হঠাৎই আদালতে আসা এক ব্যক্তি বর্ধমান আদালতের জিআরও বিভাগের লকআপের পিছনের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় দেখেন এক ব্যক্তি – যাঁর কপাল, নাকে এবং গলায় লালচে রংয়ের তিলক আঁকা তিনি ছুটে পালিয়ে যাচ্ছেন। কিছুক্ষণ পরেই তিনি দেখতে পান জিআরও সেকশনের লকআপের সঙ্গে লাগোয়া বাথরুমের দেওয়ালে মস্ত একটি সিঁদ কাটা। ওই ব্যক্তির বুঝতে অসুবিধা হয়নি ওই সিঁদ কেটেই পালিয়ে যায় কোনো আসামী। ব্যস্, গোটা বিষয়টি তিনি তাঁর পরিচিতদের জানান। আর তারপরেই বিদ্যুৎগতিতে লকআপের সিঁদ কেটে আসামী পালিয়ে যাওয়ার খবর রটে যায় সমগ্র আদালত চত্বর জুড়ে। লকআপের বাথরুমের পিছনেই যে দেওয়ালে সিঁদ কাটা হয়েছে অত্যন্ত সুচারুভাবে, সেখানেই রয়েছে আদালতের কর্মীদের সাইকেল ও মোটরসাইকেল গ্যারেজ। কার্যত এই রাস্তা দিয়ে সবসময়ের জন্যই আদালতে সাধারণ মানুষ থেকে আইনজীবী, ল-ক্লার্ক এমনকি পুলিশ কর্মীরাও যাতায়াত করেন।

যেভাবে সিঁদ কাটা হয়েছে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এতবড় সিঁদ কাটা হলেও কেন তার শব্দে ঘুম ভাঙল না লকআপের নিরাপত্তা কর্মীদের? আদপেই ভেতর থেকে এই সিঁদ কাটা হয়েছে নাকি, বাইরে থেকে কেউ সাহায্য করেছে, উঠেছে তা নিয়েও প্রশ্ন। একইভাবে নিয়মানুযায়ী আসামীদের লকআপে ঢোকানোর আগে তাদের সার্চ করা হয়। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে তাহলে কিভাবে শাবল ঢুকল লকআপের ভেতর? জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই জিআরও বিভাগের সিসিটিভি খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে।

বর্ধমান আদালতের আইনজীবী কৈলাশ শর্মা এদিন জানিয়েছেন, গত এপ্রিল মাসে মাদক সংক্রান্ত একটি কেসে বিহারের জামুইয়ের বাসিন্দা টনটন মিশ্র ওরফে বাবাকে গ্রেপ্তার করে কুলটি থানার পুলিশ। তার বিরুদ্ধে খুন, বেআইনি অস্ত্র কারবার সহ মাদক কারবারের একাধিক মামলা রয়েছে বিহার আদালত সহ ঝাড়খণ্ড এবং এই রাজ্যের অণ্ডাল, সালানপুর থানাতেও। এমনকি ২০১৪ সালে এই টনটনই বিহারের আদালত থেকে একই কায়দায় লকআপের সিঁদ কেটে নিরাপত্তারক্ষীদের বোকা বানিয়ে পালিয়ে যায়। গত এপ্রিল মাসেই গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাকে বর্ধমান আদালতে মাদক সংক্রান্ত বিশেষ আদালতে পাঠানো হয়। তারপর থেকেই সে বর্ধমানের কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে ছিল। শুক্রবার সকালে তাকে সংশোধনাগার থেকে বর্ধমান আদালতে নিয়ে আসার পর জিআরও বিভাগের লকআপে রাখা হয়।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, এর কিছুক্ষণ পর সে বাথরুমে যায়। এদিন দুপুর প্রায় দেড়টা নাগাদ জানাজানি হয় বাথরুমের সিঁদ কাটার বিষয়টি এবং টনটন মিশ্র ওরফে বাবা ওরফে পণ্ডিতজী-র পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা। আদালত সূত্রে জানা গেছে, এর আগেও তাকে অস্ত্র ও মাদক সংক্রান্ত মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বর্তমানে বর্ধমান আদালতে তার বিরুদ্ধে মাদক সংক্রান্ত দুটি মামলা বিচারাধীন। বিহারের জামুই জেলার লক্ষ্মীপুর থানা এলাকায় তার বাড়ি। এদিন এই ঘটনার পর পুলিশ কর্তারা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছেন। লকআপের বাথরুমের ভেতর থেকে একটি একদিক সূচালো শাবলও উদ্ধার করা হয়েছে। জানা গেছে, এদিন দুপুর প্রায় ১২টা নাগাদ টনটন বাথরুমে যাওয়ার পর তার সঙ্গীরা লকআপেই বেশ কিছুক্ষণ চিৎকার চেঁচামেচি করতে শুরু করে, যাতে দেওয়ালে সিঁদ কাটার আওয়াজ বাইরে না যায়। উল্লেখ্য, এদিন মাদক সংক্রান্ত মামলায় বাবা সহ আরও ৫ জনকে একই মামলায় নিয়ে আসা হয়েছিল। এব্যাপারে এদিন জেলা পুলিশ সুপার কুণাল আগরওয়াল জানিয়েছে্ন, একজন আসামী পালিয়ে গেছে সিঁদ কেটে। সে ব্যাপারে তদন্ত শুরু হয়েছে।

৩ এপ্রিল কুলটি থানার পুলিশের হাতে ধৃত টনটন মিশ্র
Like Us On Facebook