দু’বারে প্রায় দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর তৃতীয় দফায় ৯৭ লক্ষ ৫২ হাজার টাকা হাতাতে গেলে বর্ধমান পৌরসভা কর্তৃপক্ষের নজরে আসে ব্যাপারটা। এই ৯৭ লক্ষাধিক টাকার চেক আটকে দিতেই জানা গেল ইতিমধ্যেই দুষ্কৃতিরা দুটি চেকের মাধ্যমে বর্ধমান পৌরসভার ১ কোটি ৪৩ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সুদূর মহারাষ্ট্রের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের একটি শাখা থেকে। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পর এবার বর্ধমান পৌরসভার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা গায়েব হওয়ার এই ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। এই ঘটনায় পৌরসভার পক্ষ থেকে বর্ধমান থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

জানা গেছে, ১ কোটি ৪৩ লক্ষ টাকা পৌরসভার অ্যাকাউন্ট থেকে তোলা হয়েছে এই বিষয়টি গত শুক্রবার পৌরসভা কর্তৃপক্ষ জানতে পারে। পুরসভার হিসাবরক্ষক সুভাষ কর্মকার জানিয়েছেন, বর্ধমানের ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ব্রাঞ্চ থেকে তাঁরা জানতে পারেন, গত শুক্রবার মুম্বাই থেকে এই ব্রাঞ্চে ৯৭ লক্ষ টাকা পেমেণ্টের বিষয়ে জানতে চায়। তখনই বিষয়টি নজরে আসে। জনৈক কনক জুয়েলার্সের নামে ওই ৯৭ লক্ষ টাকার চেক ইস্যু করা হয়। সুভাষবাবু জানিয়েছেন, তাঁরা বিষয়টি জানতে পারার সঙ্গে সঙ্গে দিল্লীর সাইবার ক্রাইমে জানান। শনিবার বর্ধমান থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। বর্ধমান পৌরসভার পাশেই একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় বর্ধমান পৌরসভার অ্যাকাউন্ট আছে। সেই একাউন্ট থেকেই এই টাকা গায়েব হয়েছে। ব্যাঙ্ক ম্যানেজার সুদীপ্ত ঘোষ বলেন, ‘পৌরসভার আ্যাকাউন্ট আছে আমাদের শাখায়। ওই অ্যাকাউন্ট থেকেই টাকা উঠেছে। তবে গোটা বিষয়টি হয়েছে মুম্বাই থেকে। ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু হয়েছে।’

পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, চেক দুটি পৌরসভাতেই আছে। অথচ অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উঠে গেছে। পৌরসভার চেয়ারম্যান পরেশ চন্দ্র সরকার বলেন, ‘আমরা থানায় অভিযোগ করেছি। পুলিশ তদন্ত করছে। আমাদের একটি ব্যাঙ্ক আ্যাকাউন্ট থেকে ১ কোটি ৪৩ লক্ষ টাকা গায়েব হয়ে গেছে। এই ঘটনায় আমাদের কোন দোষ নেই। যা হয়েছে ব্যাঙ্কের শাখা থেকে। ব্যাঙ্কে পৌরসভার আ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলার সময় ফিনান্স অফিসার এবং এক্সিকিউটিভ অফিসারের সই থাকে। এখানে চেয়ারম্যান বা ভাইস চেয়ারম্যানের সই থাকে না। ব্যাঙ্ক ঠিক মত সই না মিলিয়ে টাকা দিয়েছে। এর দায় ব্যাঙ্কের।’ সুভাষ কর্মকার জানিয়েছেন, প্রথমে ৬ আগস্ট ৪৮ লক্ষ ২১ হাজার টাকা এবং পরে ৪ সেপ্টেম্বর ৯৫ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা তোলা হয়েছে। ক্লোন করা ওই চেকে পৌরসভার এক্সিকিউটিভ অফিসার এবং পুরপ্রধানের সই জাল করা হয়েছে। সুভাষবাবু জানিয়েছেন, এব্যাপারে এখনও পর্যন্ত তাঁদের ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, যে টাকা গায়েব হয়েছে সেই টাকা ব্যাঙ্ক ফেরত আনবে। দুষ্কৃতিরা ওই টাকা তুলে তা অন্য দুটি ব্যাঙ্কের অ্যাকাউণ্ট ঘুরে একটি নির্দিষ্ট অ্যাকাউণ্টে রেখেছে বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যেই সেই অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দেওয়া হয়েছে এবং এব্যাপারে ২জনকে সেখানকার পুলিশ আটকও করেছে বলে জানা গেছে। জেলা পুলিশ সুপার আমনদীপ জানিয়েছেন, থানায় অভিযোগ হয়েছে। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।

Like Us On Facebook