রীতিমত আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ইণ্ডিয়ান অয়েলের পাইপ লাইন থেকে অপরিশোধিত কোটি কোটি টাকার তেল চুরির হদিশ মিলল বর্ধমানে। এই এঘটনায় রীতিমত চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। খবর পেয়ে ইণ্ডিয়ান অয়েলের উচ্চপদস্থ কর্তারাও নড়েচড়ে বসেছেন। পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকালে খণ্ডঘোষ থানার শশঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের কাঁটাপুকর গ্রামে বর্ধমান-বাঁকুড়া রাজ্য সড়কের পাশে একটি সিমেণ্টের গোডাউন থেকে এই তেল চুরির হদিশ মেলে।

স্থানীয় বাসিন্দা তথা একটি তেল কলের মালিক ভরত নায়েক এদিন সকালে ওই গোডাউনের পাশ দিয়ে যাবার সময় অস্বাভাবিক মাটি ভেজা দেখে সন্দেহ জাগে তাঁর। এরপরই তিনি ভেজা মাটির কাছে গিয়ে দেখেন সেখান থেকে তেলের গন্ধ বের হচ্ছে এবং মাটির তলা থেকে তেলের বুদবুদ উঠে আসছে।

উল্লেখ্য, এই এলাকা দিয়েই হলদিয়া থেকে বারাউনি পর্যন্ত গেছে ইণ্ডিয়ান অয়েলের অপরিশোধিত তেলের পাইপ লাইন। বিপদের আশঙ্কা করেই এরপর ভরত নায়েক ইণ্ডিয়ান অয়েলের হেল্প লাইনে ফোন করেন। সেখান থেকে এরপর দুপুর নাগাদ ইণ্ডিয়ান অয়েলের কয়েকজন পদস্থ কর্তা এসে হাজির হন। তাঁদেরও গোটা বিষয়টিতে সন্দেহ হওয়ায় নিয়ে আসা হয় জেসিবি মেশিন।

এদিন ইণ্ডিয়ান অয়েলের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, এই পাইপ লাইনের প্রায় ৪০ কিমি অন্তর রিপিটার ষ্টেশন বা জয়েণ্ট লাইন রয়েছে। মাঝে মাঝেই তাঁরা সেগুলি পরীক্ষা করেও দেখেন। এদিকে, এদিন দুপুরে জেসিবি মেশিন দিয়ে ওই গোডাউন থেকে প্রায় ৬৫ ফুট দূরে মাটি খুঁড়ে জয়েণ্ট লাইন বা রিপিটার ষ্টেশন বার করতেই চোখ কপালে ওঠে ইন্ডিয়ান অয়েলের কর্তাদের। দেখা যায় এই জয়েণ্ট লাইন থেকেই প্রায় ৫ ফুট চওড়া পৃথক একটি সুড়ঙ্গ চলে গেছে সরাসরি ওই গোডাউনের ভেতর।

এরপর তাঁরা গোডাউনেও ঢোকার চেষ্টা করেন। গোডাউনের সামনে বড় বড় করে লেখাও রয়েছে সাধারণের প্রবেশ নিষেধ। কার্যত তাঁরা জোর করেই সিমেণ্টের ওই গোডাউনে ঢুকে শিউড়ে ওঠেন। দেখা যায় ,গোডাউনের একপ্রান্তে প্রায় ৫ ফুট চওড়া একটি সুড়ঙ্গ কাটা হয়েছে ওই রিপিটার ষ্টেশন পর্যন্ত। সেখান থেকে পাইপের মাধ্যমে গোডাউনে রাখা শক্তিশালী পাম্প মেশিনের মাধ্যমে সরাসরি অপরিশোধিত তেল নিয়ে আসা হচ্ছে গোডাউনে। আর এই গোডাউন থেকেই সেই তেল ট্যাঙ্কারে ভরে পাচার করা হচ্ছিল। গোটা বিষয়টি জানাজানি হতেই গোটা এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।

স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, প্রায় ৬ মাস হল ওই সিমেণ্টের গোডাউনটিকে গোডাউনের মালিক বর্ধমানের এক বাসিন্দা বিহারের এক ব্যবসায়ীকে ভাড়া দিয়েছেন। গ্রামবাসীরাই জানিয়েছেন, প্রতিদিনই ওই গোডাউন থেকে বেশ কিছু তেলের ট্যাঙ্কার যাতায়াত করত। এই ঘটনার পর খণ্ডঘোষ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ইণ্ডিয়ান অয়েলের কর্তারা। তার ভিত্তিতে গোডাউনের এক কেয়ারটেকারকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। গোডাউনের প্রচুর দামী মালপত্রও এদিন বাজেয়াপ্ত করে গোডাউন সিল করে দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে এই কারবারে কারা কারা যুক্ত তা নিয়ে পুলিশ তদন্তও শুরু করেছে। অন্যদিকে, এই ঘটনায় ইণ্ডিয়ান অয়েল কর্তৃপক্ষও রীতিমত নড়েচড়ে বসেছে। তাদের পক্ষ থেকে এব্যাপারে তদন্ত শুরু করা হয়েছে বলে এদিন জানানো হয়েছে।

 

Like Us On Facebook