কেন্দ্র সরকারের মাপকাঠির বিচারে রাজ্যের গ্রামীণ ও মহকুমা হাসপাতালগুলির মধ্যে মেমারি গ্রামীণ হাসপাতাল রাজ্যে প্রথম স্থান পেয়েছে। একই সঙ্গে পরিবেশ-বান্ধব হাসপাতাল বলেও মেমারি গ্রামীণ হাসপাতাল স্বীকৃতি পেয়েছে। পূর্ব বর্ধমান জেলার শুধু মেমারি গ্রামীণ হাসপাতালই নয়, বড়শুল ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র গতবারের মতো এ বারেও দ্বিতীয় স্থান দখল করেছে। ভাতাড় গ্রামীণ হাসপাতাল যুগ্মভাবে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) প্রণব রায় বলেন, ‘প্রথম তিনটি স্থানেই আমাদের জেলার স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি রয়েছে। এ ছাড়াও ব্লক ও গ্রামীণ মিলিয়ে ২৫টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ৭০ শতাংশের উপর নম্বর পেয়েছে। কাটোয়া ও কালনা মহকুমা হাসপাতালও ভাল নম্বর পেয়েছে।’
একটি সরকারি হাসপাতালের পরিষেবা কতটা ভালো বা খারাপ তা বিচার করতে ২০১৫ সাল থেকে কেন্দ্র সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক ‘কায়াকল্প’ নামে একটি কর্মসূচি গ্রহণ করে। যা পশ্চিমবঙ্গে ‘সুশ্রী’ নামে পরিচিত। কেন্দ্র সরকারের ঠিক করে দেওয়া পরিষেবার মান, এলাকা ভিত্তিক স্বাস্থ্য পরিষেবায় হাসপাতালের ভূমিকা সহ আটটি মাপকাঠির উপর রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর ‘পরীক্ষা’ নিয়েছিল। গত সপ্তাহে তার ফল বের হলে দেখা যায় রাজ্যের মধ্যে পূর্ব বর্ধমান জেলার তিনটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রথম তিনটে স্থান দখল করে নিয়েছে। ২০১৭ সালে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতাল একই পরীক্ষায় প্রথম হয়ে জাতীয়স্তরে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। ২০১৯ সালে জাতীয়স্তরেও কাটোয়ার স্থান এক নম্বরে ছিল।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক ব্লক-গ্রামীণ ও মহকুমা হাসপাতালকে একটি বিভাগে রেখে পরীক্ষা নিয়ে থাকে। আর এক দিকে থাকে জেলা হাসপাতাল। পূর্ব বর্ধমানে জেলা হাসপাতাল না থাকায় ২১ টি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, পাঁচটি গ্রামীণ হাসপাতাল ও দু’টি মহকুমা হাসপাতাল পরীক্ষায় বসার জন্যে ‘নিজস্ব মূল্যায়ণ’ জেলাস্তরে জমা দেয়। একটি ব্লক হাসপাতাল ছাড়া বাকিরা ৭০ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়ে রাজ্যের পরীক্ষার সুযোগ পেয়েছিল। মেমারি গ্রামীণ হাসপাতাল ‘কায়াকল্প’তে ৯৮.২৯% নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে, বড়শুল ৯৮% ও ভাতাড় ৯৭.৬২% নম্বর পেয়ে যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছে। আর পরিবেশ-বান্ধব বিভাগে মেমারি ১০ এর মধ্যে ১০ই পেয়ে প্রথম হয়েছে। পিএইচসির মধ্যে রায়না ২ ব্লকের বিনোদপুর প্রথম হয়ে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার পাবে।
সিএমওএইচ বলেন, ‘পরিষেবার মান ও পরিবেশ বান্ধব, দু’টি বিভাগেই প্রথম হওয়ার জন্যে মেমারি গ্রামীণ হাসপাতাল ২০ লক্ষ টাকা পুরস্কার পাবে, বড়শুল পাবে ১০ লক্ষ টাকা। ৭০ শতাংশের বেশি নম্বর পাওয়া বাকি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র এক লক্ষ টাকা করে পাবে।’ জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের রোগী কল্যাণ সমিতির অ্যাকাউন্টে ওই পুরস্কারমূল্য চলে যাবে। ওই টাকায় রোগীর পরিষেবা-সংক্রান্ত যাবতীয় খরচ করা যাবে।
মেমারি ১-এর বিএমওএইচ হর্ষ ঘোষ বলেন, ‘এই পুরস্কার খুবই গর্বের। সবার সহযোগিতার জন্যেই এটা সম্ভব হয়েছে। আরও ভালোভাবে পরিষেবা দিতে চাই।’ পরপর দু’বার একই স্বীকৃতি পেয়ে খুশি বর্ধমান ২ বিএমওএইচ অভিষেক যশ। যু্গ্ম তৃতীয় হয়ে ভাতাড়ের বিএমওএইচ সঙ্ঘমিত্রা ভৌমিক বলেন, ‘পরিছন্নতা, চিকিৎসা পরিষেবা, শিশু মৃত্যু না থাকা, প্রসূতি পরিচর্যা, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি দিকগুলি লক্ষ্য রেখেই সাফল্য এসেছে।’