বর্ষায় ধান চাষে চাষীদের জল পাওয়া নিয়ে ঘোরতর দুশ্চিন্তা দেখা দিল পূর্ব বর্ধমান ও পশ্চিম বর্ধমান, হাওড়া, হুগলী ও বাঁকুড়া জেলার চাষীদের। চলতি বর্ষা মরশুমে অন্যান্য বছরের তুলনায় এখনও পর্যন্ত ৪০ শতাংশ বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় এবং বৃষ্টিপাতের এই ঘাটতি পূরণ না হলে এবার খরিফ চাষে জলসঙ্কটের সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। পাশাপাশি মাইথন এবং পাঞ্চেত জলাধারেও প্রয়োজনীয় খরিফ চাষের জন্য পর্যাপ্ত জল না থাকায় শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায় তা নিয়েই রীতিমত চিন্তিত চাষী থেকে প্রশাসনিক আধিকারিকরা। অন্যান্য বছরের মত এবারেও এই ৫ জেলার দামোদরের জলের ওপর নির্ভরশীল এলাকায় চাষের জল সরবরাহ নিয়ে শুক্রবার ডিভিশনাল কমিশনার বরুণ রায়ের নেতৃত্বে এই ৫ জেলার আধিকারিকদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হল বর্ধমান সার্কিট হাউসে। হাজির ছিলেন ডিভিসির প্রতিনিধিরাও।
এদিন বৈঠকের পর ডিভিশনাল কমিশনার বরুণ রায় জানিয়েছেন, যেহেতু এবারে প্রয়োজনের তুলনায় প্রায় ৪০ শতাংশ বৃষ্টিপাত কম হয়েছে তাই জল ছাড়ার ক্ষেত্রে বিলম্ব হতে পারে। তিনি জানিয়েছেন, মাইথন এবং পাঞ্চেত জলাধারে যে জল মজুদ রয়েছে তাতে ২৫ জুলাই থেকে জল ছাড়ার কথা থাকলেও তাঁরা ওইদিন ফের একটি রিভিউ বৈঠক করবেন। এর মধ্যে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কি হয় তা দেখার পরই জল ছাড়ার ব্যাপারে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সামনের কয়েকদিন স্বাভাবিক বৃষ্টি না হলে সেক্ষেত্রে ২৫ জুলাইয়ের পরিবর্তে ২৮ জুলাই জল ছাড়া শুরু হতে পারে।
এদিন এই বৈঠকে হাজির ছিলেন পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক বিজয় ভারতী, জেলা সভাধিপতি শম্পা ধাড়া, জেলা কৃষি দফতরের যুগ্ম কৃষি আধিকারিক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় সহ জেলা আধিকারিকরাও। জগন্নাথবাবু এদিন জানিয়েছেন, এখনও গোটা জেলায় যে বৃষ্টিপাত হয়েছে তাতে সমস্যা রয়েছে। কোথাও কোথাও জলের অভাবে বীজতলা শুকিয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দিচ্ছে। তবে দু-একদিনের মধ্যেই বৃষ্টি শুরু হলে এই সমস্যা কেটে যাবে। তবে যদি বৃষ্টি না হয় সেক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। আর তাই চাষীভাইদের ফসল বীমা করানোর ওপর তাঁরা জোর দিচ্ছেন। জগন্নাথবাবু জানিয়েছেন, অন্যান্য বছরের জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময় যেখানে ৩৯ হাজার হেক্টর এলাকায় বীজতলার কাজ হয়ে যায় এবারে গোটা জেলায় সেটা হয়েছে ৩৩-৩৪ হাজার হেক্টর এলাকায়। অন্যান্য বছরে যেখানে ২০ হাজার হেক্টর এলাকায় চাষ শুরু হয়ে যায় জলের অভাবে সেখানে এখনও পর্যন্ত হয়েছে (জুলাই মাসের মাঝামাঝি) প্রায় ৮ হাজার হেক্টর এলাকায়। উল্লেখ্য, গোটা পূর্ব বর্ধমান জেলায় মোট ধান চাষের এলাকা রয়েছে ৩ লক্ষ ৮০ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে গড়ে চাষ হয় ৩ লক্ষ ৬০ হাজার হেক্টর। তার মধ্যে ডিভিসি সেচসেবিত এলাকা রয়েছে ২ লক্ষ ৫ হাজার হেক্টর। এছাড়াও ১ লক্ষ ৩৫ হাজার হেক্টর এলাকা চাষ ডিপ টিউবওয়েল বা নদী থেকে জল উত্তোলনের মাধ্যমে হয়। তবে তিনি জানিয়েছেন, আগষ্ট মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত খরিফ চাষের স্বাভাবিক সময় রয়েছে।