বিজেপির নাম না করেই এদিন পূর্ব বর্ধমান জেলার সমস্ত বিডিও এবং থানাকে গো রক্ষার নামে হিংসাশ্রয়ী কার্যকলাপ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়ে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার বর্ধমানের সংস্কৃতি লোকমঞ্চে প্রশাসনিক বৈঠকে প্রত্যেকটি দপ্তরকে নিয়ে আলোচনার মাঝেই এদিন মুখ্যমন্ত্রী বিজেপির গোরক্ষার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ২০-২২টি গরু গ্রামে ঢুকিয়ে দিয়ে হিংসাশ্রয়ী কাজ কোনোমতেই বরদাস্ত করা হবে না। কড়া হাতেই এগুলি দমন করা হবে। এরপরই তিনি মেমারির বিডিওকে ডেকে কার্যত সকল বিডিও এবং থানার আইসি ওসিদের নির্দেশ দেন, গ্রামে কারা কারা ঢুকছে, কারা থাকছে, কারা বেড়িয়ে যাচ্ছে – এব্যাপারে কড়া নজরদারী চালাতে হবে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় কতগুলি ক্লাব রয়েছে, তাদের কতগুলির রেজিষ্টেশন আছে এই সমস্ত বিষয়ে কেবলমাত্র নজরদারী রাখাই নয়, এব্যাপারে তাঁকে রিপোর্ট দেবারও নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মূলত, সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বিজেপির এই বাড়বাড়ন্তকে যে কোনোভাবেই রাজ্যের শাসকদল ভাল চোখে দেখছে না এদিন প্রশাসনিক কর্তাদের নির্দেশের মধ্যে দিয়েই তিনি তা ব্যক্ত করেছেন। এরই পাশাপাশি এদিন মুখ্যমন্ত্রী সাফ জানিয়ে যান জল ধরো জল ভরো সহ ১০০ দিনের প্রকল্প – সরকারী সমস্ত কাজে দুর্নীতি হলে কাউকেই রেয়াত করা হবে না। তাতে রাম-শ্যাম যেই জড়িত থাকুক না কেন। এদিন পূর্ব বর্ধমান জেলার প্রথম প্রশাসনিক বৈঠকে এসে এভাবেই প্রশাসন এবং রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের কড়া বার্তা দিয়ে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।
এদিন পূর্ব বর্ধমান জেলার পুলিশ লাইনে প্রকাশ্য সভার পর সংস্কৃতি লোকমঞ্চে প্রশাসনিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। আর এই বৈঠকেই তিনি একের পর এক প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের কাছ থেকে জানতে চান। প্রশাসনিক বৈঠকেই মুখ্যমন্ত্রী বিডিওদের নিয়ম মাফিক মিডডে মিল ও আইসিডিএস সেন্টারগুলিকে পরিদর্শন করার নির্দেশ দেন। আপাতত পূর্ব বর্ধমান জেলার শান্তি শৃঙ্খলা সঠিক রয়েছে বলে জানিয়েও এদিন মুখ্যমন্ত্রী অবৈধ বালি, কয়লা ও পাথর পাচার করা নিয়েও যে কড়া নজর রেখেছেন তাও জানিয়ে দেন। জেলার কয়েকটি থানার পুলিশ কর্তাদের রীতিমত হুঁশিয়ারীও দিয়েছেন। এই হুঁশিয়ারী থেকে বাদ দেননি নিজের দল সহ সমস্ত রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদেরও। বর্ধমান, বীরভূম ও বাঁকুড়া জেলার কয়লা খাদান, বালি এবং পাথর খাদান নিয়ে তিনি এদিন কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন পুলিশ কর্তাদের। সরাসরি তিনি বলেন, ১০টি চালান কেটে ২০টি লরী পাচার হচ্ছে কিভাবে। এই পাচারের টাকার বখরা হচ্ছে। ঘুষ খাওয়া হচ্ছে। এসব বরদাস্ত করা হবে না। অবিলম্বে বেআইনি এই কারবার বন্ধ করতে হবে। যেই দোষী হোক না কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন, এব্যাপারে কড়া নজরদারী করতে ওয়াচ টাওয়ার, সিসিটিভি লাগাতে হবে। এদিন মুখ্যমন্ত্রী মঙ্গলকোটে খুনের ঘটনায় দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দিয়েছেন।