পোস্তার পর মাঝেরহাট ব্রিজ। একের পর এক ব্রিজ ভেঙে পড়ার পর এবার আতঙ্ক ছড়াল বর্ধমান শহরের রেলওয়ে ওভারব্রিজ নিয়ে। প্রায় অর্ধ শতাব্দী প্রাচীন এই রেলওয়ে ওভারব্রিজের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে রীতিমত উদ্বেগ আর আশঙ্কা বাড়ছে। জানা গেছে, ২০০৫ সালেই পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ এই ব্রিজটিকে রুগ্ন বলে ঘোষণা করে। এই ব্রীজের ওপর দিয়ে ভারী যান চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এই ঘোষণাকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়েই রাতভর অবাধে চলছে অতিরিক্ত পণ্য বোঝাই গাড়ি।
বর্ধমান স্টেশন সংলগ্ন এই ব্রিজের মাধ্যমে যোগাযোগ রয়েছে কাটোয়া মহকুমার পাশাপাশি বীরভূম, মুর্শিদাবাদ জেলারও। ফলে ব্রিজের ওপর চাপ ক্রমশই বাড়ছে। বর্ধমান শহরের ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ভবানীপ্রসাদ গুপ্ত জানিয়েছেন, মাঝেরহাট ব্রিজের মত যেকোনো সময়েই দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন তাঁরা। বিশেষত এই ব্রীজের তলাতেই রয়েছে রেলের বিদ্যুৎবাহী তার। দুর্ঘটনা ঘটলে তার পরিণতি কি হতে পারে তা ভেবেই শঙ্কিত স্থানীয়রা।
উল্লেখ্য, এই ব্রিজকে রুগ্ন ঘোষণা করার পাশাপাশি ইতিমধ্যেই এই ব্রিজের পাশে তৈরি হয়েছে ৪ লেনের নতুন ব্রিজ। কিন্তু এখনও অ্যাপ্রোচ রোড সম্পূর্ণ না হওয়ায় এই পুরানো ব্রিজ দিয়েই চলছে ঝুঁকির যাতায়াত। বর্ধমানের ভাণ্ডারডিহির বাসিন্দা তপন রায় জানিয়েছেন, প্রতিদিনই এই ব্রিজের ওপর দিয়েই তাঁদের বর্ধমান শহরে আসতে হয়। কিন্তু ব্রিজের যা অবস্থা তাতে প্রতিদিনই কার্যত তাঁদের প্রাণ হাতে নিয়েই ব্রিজ পার হতে হচ্ছে।
বর্ধমান স্টেশন ম্যানেজার স্বপন অধিকারী জানিয়েছেন, ২০০৫ সালেই ব্রিজের রুগ্ন অবস্থা দেখে ব্রিজটিকে কার্যত অচল বলেই ঘোষণা করা হয়। ব্রিজের ওপর দিয়ে ভারী পণ্যবাহী গাড়ি যাতায়াতেও নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা কেউ মানছেন না। এব্যাপারে জেলা প্রশাসনের গোটা বিষয়টি দেখা দরকার বলেই তিনি অভিমত ব্যক্ত করেছেন। পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, ২০১৯ সালের মধ্যেই নতুন ব্রিজ চালু হয়ে যাবে বলে তাঁরা আশা করছেন। তবে ব্রিজের দেখভাল করার বিষয়টি সম্পর্কে স্বপনবাবু জানিয়েছেন, ব্রিজটি নিয়মিত খতিয়ে দেখা হয়। কোথাও কোনো ত্রুটি থাকলে দ্রুত তা মেরামতও করা হয়।
অপরদিকে, মাঝেরহাটে ব্রিজ ভেঙে পড়ার পর বর্ধমানের এই রেলওয়ে ওভারব্রিজ নিয়ে আতঙ্কের প্রশ্নে জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, গোটা বিষয়টি নিয়ে তাঁরা নজরদারী করছেন। কিভাবে পণ্যবাহী গাড়িগুলিকে অন্যদিক দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া যায়, তা নিয়ে তাঁরা আলোচনাও করছেন। জেলাশাসক জানিয়েছেন, নতুন ব্রিজ চালু হলে এই সমস্যা আর থাকবে না। তাই রেল কর্তৃপক্ষকে দ্রুত নতুন ব্রিজের কাজ শেষ করার জন্য বলাও হয়েছে।
দিনের বেলায় শহরে যানজট নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্রিজে পণ্যবাহী ট্রাক চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় রাত্রি ৯টার পর থেকে রাতভর এই ব্রিজের ওপর দিয়েই হু হু করে ছুটে চলে অতিরিক্ত পণ্যবোঝাই গাড়ি। আর এরফলেই দিনদিন এই ব্রিজের অবস্থা খারাপ হচ্ছে। দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কায় ভুগছেন সাধারণ মানুষ। জানা গেছে, প্রশাসন এবার রাতেও এই ব্রিজের উপর দিয়ে ভারী যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে চলেছে।