বর্ধমানের খাগড়াগড় কাণ্ডে জড়িত আসাদুল্লা সেখ ওরফে রাজাকে চেন্নাইয়ের থোরিয়াপাক্কাম থেকে গ্রেফতারের ঘটনায় চমকে উঠল বর্ধমানের ভাতাড় থানার নিত্যানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ডাঙাপাড়ার মানুষজন। ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণ ঘটে। এর কিছুদিন পরই আচমকাই উধাও হয়ে যায় আসাদুল্লা সেখ ওরফে রাজা। এর কিছুদিন পর তাঁর স্ত্রী হালিমা বিবি দুই মেয়েকে নিয়ে তিনিও চলে যান তাঁর বাপের বাড়ি মঙ্গলকোটের কুলসোনা গ্রামে। আর ফিরে আসেননি বাড়িতে। তারও কিছুদিন পর বিধবা মা আসেদা বিবিও অন্য ছেলে আব্দুল বাসেরের কাছে চলে যান। বর্তমানে তিনি অসুস্থ। কিন্তু মায়ের অসুস্থতা সম্পর্কেও কোন খোঁজ নেননি আসাদুল্লা সেখ – এমনটাই জানিয়েছেন বাড়ির লোকজন। বাড়িতে আজও সেই তালা ঝুলছে।
মঙ্গলবার সকালে কলকাতার এসটিএফ রাজাকে গ্রেফতারের খবর এবং তাঁর বাড়ি ভাতাড়ের ডাঙাপাড়ায় এই খবর রটতেই এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। সূত্রের খবর, বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পাশাপাশি রাজা জেএমবির সঙ্গেও গোপনে যোগাযোগ রাখত। আইইডি বানানোয় প্রশিক্ষণও নিয়েছিল রাজা। একইসঙ্গে জেএমবিতে নিয়োগের ক্ষেত্রেও সে সক্রিয় ছিল। বুদ্ধগয়া বিস্ফোরণ কাণ্ডেও নাম জড়িয়েছে আসাদুল্লার। বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডের পর জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের জঙ্গী সংগঠনটি একটু দুর্বল হয়ে যায়। পরবর্তীকালে আস্তে আস্তে ফের সংগঠন চাঙ্গা হতে শুরু করে। আসাদুল্লাও কাজে নেমে পড়ে। তাঁর শ্বশুরবাড়ি মঙ্গলকোটের কুলসোনা গ্রামে। মঙ্গলকোটের শিমূলিয়ায় সে জঙ্গী প্রশিক্ষণও নিয়েছিল।
এদিকে, আসাদুল্লার গ্রেফতারের খবরে ডাঙাপাড়ার মানুষ রীতিমত চুপ করে গেছেন। কেউই তাঁর ব্যাপারে মুখ খুলতে রাজি হননি। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, ২০১৪ সালের আগে আসাদুল্লা সেখ ট্রাক্টর চালাতো এবং চাষের কাজ করত। সে যে আদৌ গোপনে জঙ্গী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত ছিল তা কেউই বুঝতে পারেনি মঙ্গলবারের আগে। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, আসাদুল্লারা ৬ ভাই। সকলেই আলাদা থাকেন। ২০১৪ সালের খাগড়াগড় বিস্ফোরণের কিছুদিন পরই আসাদুল্লা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর একদিনও গ্রামে আসেননি বলে জানিয়েছেন আসাদুল্লার দাদা আব্দুল বাসের। তিনি জানিয়েছেন, তাঁরা জানতেন চেন্নাইয়ে ঢালাইয়ের কাজ করতে গিয়েছিল আসাদুল্লা। কিন্তু খাগড়াগড় কাণ্ডের পর বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার পর আর ভাই আসাদুল্লার সঙ্গে কোন যোগাযোগ নেই কারও। আব্দুল বাসের জানিয়েছেন, আসাদুল্লা যে জঙ্গী কাজে যুক্ত ছিল তা তাঁরা জানতেন না। তবে সে নিয়মিতই শিমুলিয়া মাদ্রাসায় যেত, নামাজ পড়ত।